শিক্ষা-সংস্কৃতি

নির্বাহী প্রকৌশলীর দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে না ইইডি

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশের পরও একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির অভিযোগ বিগত সাড়ে ৮ মাসেও তদন্ত করেনি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি)। ইইডি’র প্রধান প্রকৌশলী বলছেন, দুর্নীতি তদন্তের সক্ষমতা নেই তাদের। অন্যদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনও না কোনও প্রভাবের কারণে তদন্ত করতে পারছে না অধিদফতর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে দুর্নীতি এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পত্র দেওয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগকে। ওই চিঠির সূত্র উল্লেখ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) প্রধান প্রকৌশলীকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। মন্ত্রণালয়ের ২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বরের ওই চিঠিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দাখিল করা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। কিন্তু সাড়ে আট মাস পার হয়ে গেলেও তদন্ত শুরু করেননি প্রধান প্রকৌশলী।

জানতে চাইলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘আসলে এই ধরনের বিষয়ে তদন্ত করার মতো যেসব সংস্থা আছে— তারাই করে, তাদের লোকবল আছে, সোর্স আছে। অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সংক্রান্ত হলে আমরা তদন্ত করতে পারি। ধরেন কেউ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলো বা কাজ ছাড়া বিল দিয়েছে কিনা, কাজের মান খারাপ কিনা— এমন বিষয় যেগুলো আমাদের আওতার মধ্যে আছে সেগুলো আমরা তদন্ত করতে পারি।’
তদন্ত শুরু না হলেও অধিদফতর আর কোনও পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘যেহেতু আমার দফতরে চিঠি এসেছে, সাক্ষী পাঠানোর জন্য দুদক চিঠি দিয়েছে, দুদকের অনুসন্ধান যিনি করবেন তার ওখানে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের পাঠিয়েছি।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠির ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই তদন্ত আমি করতে পারবো না। তদন্ত করার সক্ষমতা নেই। তারপরও আমাকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

তবে এই অভিযোগের তদন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শুরু করেছে। ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবরের দুদকের অভিযোগে বলা হয়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের ঢাকার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল হাসেম সরদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ২০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

চিঠিতে অভিযোগ তদন্তে দুদক সুষ্ঠু অনুসন্ধান চালাতে অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল হাসেম সরদার, সহকারী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাফর আলী সিকদার এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান আলীর বক্তব্য শোনা ও গ্রহণ করার জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরকে চিঠি দেয়।

অভিযোগ

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি) বর্তমানে যেসব পূর্ত কাজ করছে, তার মধ্যে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের ২৫টি প্রকল্পের কাজ মাত্র পাঁচজন ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যদিও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ২০১৬ ও ২০২২ সালের নির্দেশিকাসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী একজন কর্মকর্তার একটির বেশি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকার কথা নয়। নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল হাশেম সরদারের কাছেই ৩৯টি প্রকল্প ছিল। পরে বর্তমানে ১১টি প্রকল্পের পিডি ছিলেন তিনি। এগুলোর আর্থিক বাজেট ৩ হাজার ৫৯১ কোটি টাকার বেশি। এসব অভিযোগ ছাড়াও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ২০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে পাচারের অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগ— ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা শক্তিশালী হওয়ার কারণে তদন্ত করা যাচ্ছে না। তাছাড়া যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা একযুগের বেশি প্রধান কার্যালয়ে রয়েছেন। ফলে প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাস্তবায়নের নানা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি-অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ওঠে। সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন