অনেক বছর পর নিজেকে স্বাধীন অনুভব করছেন মনির খান
দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে এনেছিল বাঙালি জাতি। ত্রিশ লাখ শহিদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বীর বাঙালি পায় একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ এবং একটি লাল-সবুজের পতাকা।
গতকাল ১৬ ডিসেম্বর ছিল মহান বিজয় দিবস। ঐতিহাসিক এই দিনটি প্রতিবছরই নানা আয়োজনে উদযাপন করা হয়। এবারও তাই হচ্ছে। এরইমধ্যে বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে আলোচনায় রয়েছে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার কনসার্টটি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে কনসার্টটির। নতুন প্রজন্মকে স্বাধীন বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করানোর জন্য রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত এ কনসার্টে লাল-সবুজের বাংলাদেশের গান ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে।
এদিন 'সবার আগে বাংলাদেশ' শীর্ষক এ কনসার্টে অন্যান্যদের মতো পরিবেশনা করেছেন কোটি বাঙালির হৃদয়ে ঠাঁই করে নেয়া, তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী সংগীতশিল্পী মনির খান। সংসদ ভবন এলাকায় এই পরিবেশনার মাধ্যমে দীর্ঘ ১৫ বছর পর খোলা আকাশের নিচে সব শ্রেণিপেশার দর্শকে-শ্রোতাদের গান শোনানোর সুযোগ পেয়েছেন এ শিল্পী।
তিনি বলেন, আজ থেকে প্রায় ১৫/১৬ বছর আগের কথা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমি অঘোষিত কালো তালিকায় ছিলাম। বলতে পারেন, বিএনপির মতাদর্শ সাংস্কৃতিক তারকারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানে তাদের কাজের সুযোগ ছিল না। আমারও কোনো সুযোগ ছিল না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে নানাভাবে আমার কণ্ঠরোধ করে রাখা হয়েছিল।
এদিকে গত ৫ আগস্ট সাধারণ শিক্ষার্থী ও মানুষের তোপের মুখে পড়ে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর অন্যান্য অঙ্গনের মতো সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও পরিবর্তন এসেছে ব্যাপক। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতার পর এখন সব শিল্পীরাই কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। এরইমধ্যে বাংলাদেশ বেতারের চারটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন মনির খান। এবার বিজয় দিবসে 'সবার আগে বাংলাদেশ' শীর্ষক কনসার্টে সংসদ ভবন এলাকায় পরিবেশনা করবেন এ তারকা।
এ ব্যাপারে 'অঞ্জনা' খ্যাত শিল্পী বলেন, আজ সংসদ ভবন এলাকায় খোলা আকাশের নিচে দর্শক-শ্রোতাদের জন্য মন খুলে গাইতে পারব। এটা একজন শিল্পীর জন্য যে কত বড় পাওয়া, তা হয়তো আমি ভাষায় বলে বোঝাতে পারব না। তবে আমি আজ সত্যিই অনেক আনন্দিত। দীর্ঘদিন পর দেশর কোনো বিজয় দিবসের কনসার্টে গাইতে পারছি। অনেক বছর পর মনে হচ্ছে সত্যিই আজ আমরা স্বাধীন। আজ শিল্পীরা তাদের মন খুল গান গাইতে পারছে।
এছাড়া সবশেষ দর্শক-শ্রোতাদের বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে মনির খান বলেন, আমার সব শ্রোতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা। সবার প্রতি একটাই আহ্বান থাকবে, আপনারা ভিনদেশি সংস্কৃতি নয়, আমাদের বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ভালোবাসুন, এ সম্পর্কে জানুন। দেশের প্রকৃত ইতিহাস জানুন এবং সুস্থ ধারার বাংলা গানের সঙ্গে থাকুন।