ইয়ালে (শীতে) জইম্যা গেছি বাপু, জীবন শেষ!

রাত্রির নিস্তব্ধতায় শীতের প্রকোপে নিদারুণ কষ্ট বুকে নিয়ে রাত পোহাচ্ছেন শারিরীক প্রতিবন্ধী রেহেনা খাতুন। রেহেনা খাতুন দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলস্টেশনে জীবন জিবিকা নির্বাহ করছেন।
তিনি পায়ে হাটতে পারেন না দুই হাতের উপর ভর করে তাকে চলতে হয়। সারাদিনে ভিক্ষাবৃত্তি করে যে টাকা উপার্জন হয় সেটা দিয়ে তার পেটের খুদা মেটাতে হয়। এই তীব্র শীতে ষ্টেশনের যাত্রীছাউনির নিচে পাকা মেজেতে ঠান্ডার মধ্যে গায়ে একটা কালো পলিথিন জড়িয়ে শুয়ে আছেনা রেহেনা খাতুন। প্রচন্ড কুয়াশা আর শীতে গায়ের পলিথিনটাও ভিজে একাকার। ছিন্নমূল এইসব মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।
ভোরে জুবুথুবু অবস্থায় কথা হয় শারিরীক প্রতিবন্ধী রেহেনা খাতুনের সাথে তিনি বলেন, আমাগো দেকপো কেডো (দেখবে কে)? এই ইয়ালে (শীতে) আমরা মরলেই কি, বাঁচলেই কি? ইয়ালে (শীতে) জইম্যা গেছি জীবন শেষ। তার সাথে কথা বলে আর তার এই অবস্থা দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি কান্না কান্না কন্ঠে প্রশ্ন করলাম এই শীতে পলিথিন গায়ে শুয়ে কি শীত যায়, কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলেন ইয়ালে (শীতে) বড়লোকগো আনন্দোর আর আমাগো জন্য কষ্টের। কম্বল না থাকায় পলিথিন গায়ে দিয়েই হুয়ে (শুয়ে) থাকি। আমগো মত মানুষের কাছে এইডোই মেলা কিছু।
তার পাশেই থাকেন আমেনা খালা, তিনিও প্রায় ১০ বছর ধরে এই স্টেশনে কষ্টের সাথে দিনপার করছে। সম্পর্কে তারা নিকটতম আত্মীয় না হলেও স্টেশনে থাকার সুবাদে দুইজন মা-মেয়ে হিসেবে পরিচিত। আমেনা খালার বাড়ি বগুড়ায় তবে সন্তানরা খোঁজ-খবর না নেওয়ায় তিনি এখন ভিক্ষাবৃত্তি করে স্টেশনেই পড়ে থাকে।
প্রায় ৭০ বছরের আমেনা খালা বলেন, থাকার জায়গা তো নাই, কই থাকমু। ইয়ালে (শীতে) কষ্ট হয়। গরম কাপড় তো নাই। খাইতেই পারি না, কাপড় কিনমু ক্যামনে।' এই স্টেশনে আমাগো মত আরো প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন আছে, যারা হারাদিনে ভালো থাকলিউ রাত আসলে ওগো ডর করে যে এই ইয়ালে (শীতে) রাত কেমনে পোহাবি। এইসব মানুষগুলো যাত্রী ছাউনিতে, বড় দালানের দেওয়ালের পাশ ঘেঁষে ঘুমিয়ে রাত কাটান। এসব মানুষকে দেখার যেন কেউ নেই। তাদের কষ্টের শেষ নেই কষ্ট নিয়েই যেন তাদের জীবন গড়া।
এসব ছিন্নমূল মানুষ রাস্তার পাশের ফুটপাতে কোনো রকম পুরোনো কাপড় জড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করে। দিনমজুর, ভবঘুরে, রিকশাচালক এবং ভিক্ষাবৃত্তির মতো পেশায় জড়িত তারা।
শীতের কষ্ট লাঘবে সরকারি অনুদানের পাশাপাশি সমাজের উচ্চবিত্তবানদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন এসব ছিন্নমূল মানুষ।
Comments