Leadরাজনীতি

যেসব বিষয় সামনে রেখে দল গোছাচ্ছে বিএনপি

হাকিম মাহি

এক মাস আগেও এমন উচ্ছ্বাস ছিল না বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সময়ের ব্যবধানে পাল্টে গেছে সব হিসাব-নিকাশ। নেতাকর্মীদের আনাগোনায় মুখর দলীয় কার্যালয়।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে শপথ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের একমাস না পেরোতেই বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল থেকে দাবি উঠেছে নির্বাচনের। এরই মধ্যে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি দল গোছানো শুরু করেছে। এজন্য দলটি চারটি বিষয়কে সামনে রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এগুলো হলো, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া,নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা,বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংস্কার ও নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি। দলটির নীতি-নির্ধারণীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন,‘বিএনপি সবসময়ই প্রধান একটি রাজনৈতিক দল। বিগত স্বৈরাচারী সরকার ১৬ বছর চেষ্টা করেও বিএনপিকে নির্মূল করতে পারেনি। বরং আরও সুসংগঠিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার সঙ্গে জীবন বাজি রেখে স্বৈরাচার মুক্ত করেছে।’

জাতি একটি মুক্ত-স্বাধীন দেশ পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘এই গণতান্ত্রিক পরিবেশকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ যেন দেওয়া যায়,তার জন্য যা যা করা দরকার,সব দাবি করবো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে। নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।’

বিএনপিকে গোছানো দল হিসেবে উল্লেখ করে রিজভী বলেন,‘বিএনপি সবসময়ই গোছানো একটি দল। সবসময়ই প্রস্তুত আমরা। আমাদের নতুন করে গোছানোর কিছু নেই। তবে,সময় যেহেতেু পেয়েছি,আরেকটু সুসংগঠিত করবো দলকে।’

একই কথা বললেন অভিমত জানালেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেন,‘শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য সব ধরনের ঘৃণ্য পন্থা অবলম্বন করেছে। তারা সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে দমানোর জন্য শত শত মানুষ হত্যা করেছে। পরে সেই কোটা আন্দোলন সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে পরিণত হয়। স্বৈরাচারের পতন হয়। এখন আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। চাই গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে। এজন্য আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।’

বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারের জন্য যৌক্তিক সময় দেওয়া উচিত বলে মনে করেন প্রিন্স। তিনি বলেন,‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক কিছু সংস্কারের জন্য সময় দিতে চাই। তবে,এই সময়ের মধ্যেই পরিবর্তনগুলো করে জনগণের নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানাই।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে মনে করেন প্রিন্স। এজন্য সেগুলো সমাধানের পরামর্শও দেন। তিনি বলেন, ‘সরকারের এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন প্রশাসনে,বিচার বিভাগে। এগুলো সরকার এখন মোকাবিলা করছে। সেগুলো কাটিয়ে উঠতে আমরাও সরকারকে সহযোগিতা করছি। সরকারের কাছে আবেদন থাকবে, প্রশাসনের মধ্যে এখনো অনেক ‘আওয়ামী জঞ্জাল’ রয়েছে,সেগুলো দূর করে দেশকে একটি নির্বাচনের মুখোমুখি করা। সেজন্য আগে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে’।

নারী স্বাধীনতা নিয়েও কথা বলেছেন দলটির স্বনির্ভর বিষয়ক সহ-সম্পাদক নিলোফার চৌধুরী মনি। তিনি বলেছেন,‘দেশ স্বৈরাচার মুক্ত করতে নারীরাও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। বিএনপি সবসময় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তি ও ক্ষমতায়নে সবকিছু করবে।’ তিনি বলেন,‘বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময়ে বিভিন্নভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বিএনপি। কিন্তু দলটি কখনো রাজনীতির মাঠ ছাড়েনি। বিএনপি সবসময় জনগণের পাশে আছে ও থাকবে।’

এই নেত্রী আরও বলেন,‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় দলটি এখন আরও বেশি শক্তিশালী হয়েছে। তিনি যেটা বলেছেন, আগামীতে এই দলে পূর্বের মতো নীতিবান রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা সামনের সারিতে স্থান পাবেন।’