বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের যে প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ে
পরিবারের ভালোবাসায় বেড়ে উঠে শিশুরা। তবে সব পরিবারের ধরণ এক নয়। অনেক পরিবারই বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয় আর এর প্রভাব পড়ে শিশুদের মধ্যেও। একাধিক গবেষণা থেকে জানা গেছে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের সন্তানের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি করা একটি নতুন গবেষণায় সতর্ক করে বলা হয়েছে যেসব শিশুর বাবা-মা বিবাহ বিচ্ছেদের পথ বেঁছে নেন পরবর্তীতে তাদের সন্তান স্ট্রোকের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। পিতামাতার বিচ্ছেদ মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, যা শিশুদের শারীরিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে।
হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সম্প্রতি পলস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে শিশুরা পিতামাতার বিচ্ছেদের শিকার, তাদের পরবর্তী জীবনে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি অন্যান্য শিশুদের তুলনায় অনেক বেশি।গবেষণাটি পরিচালনা করেন টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এসমে ফুলার-থমসন। তিনি ১৩,০০০ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির উপর এই গবেষণা করেছেন, যারা ৬৫ বছরের বেশি বয়সী। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুর পিতামাতা ১৮ বছরের আগেই বিচ্ছেদ করেছেন, তাদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা ৬০% বেশি। এই শিশুদের তুলনায়, যারা একটানা পারিবারিক পরিবেশে বড় হয়েছে, তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক কম।
গবেষণার ফলাফলগুলো উদ্বেগজনক, কারণ এটি প্রমাণ করে যে, পিতামাতার বিচ্ছেদ একটি শক্তিশালী ঝুঁকি হিসেবে কাজ করে, যা স্ট্রোকের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। গবেষণায় বলা হয়েছে, বিচ্ছিন্ন পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুরা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপের শিকার হয়, যা তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরও খারাপ প্রভাব ফেলে।
এছাড়া, বিচ্ছেদের পরের পরিবেশে শিশুরা নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, যেমন মা-বাবার মাঝে চলতে থাকা দাম্পত্য কলহ, বিচার-বিভাজন এবং মনস্তাত্ত্বিক চাপ। এসব চাপ শরীরের স্ট্রেস রেসপন্স সিস্টেমকে অস্থির করে তোলে, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক অসুস্থতা সৃষ্টি হয়। এই শারীরিক সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ এবং অনিদ্রা, তা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
গবেষণার সহ-লেখক এসমে ফুলার-থমসন বলেন, এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে, বিচ্ছিন্ন পরিবারের শিশুদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেশি। এমনকি তাদের ওপর শারীরিক বা যৌন নির্যাতনও না থাকলেও।
এই গবেষণা থেকে একটি স্পষ্ট বার্তা এসেছে—বিচ্ছিন্ন পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সঠিক যত্ন নেয়া এবং সহানুভূতির পরিবেশ তৈরি করা উচিত, যাতে তারা ভবিষ্যতে স্ট্রোকের মতো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারে।
Comments