বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি,কোর্ট যেটা বলবে সেটি আমাদের মানতে হবে: বুয়েট উপাচার্য
এপ্রিল ১, ২০২৪ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হাইকোর্ট স্থগিত করেছেন। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, কোর্টের আদেশ শিরোধার্য। কোর্ট যেটা বলবে সেটি আমাদের মানতে হবে।
সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই কথা বলেন উপাচার্য। ছাত্ররাজনীতি চালু হবে কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, সেটি করতে গেলে আমাকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই করতে হবে। কোর্টের অবমাননা আমরা করতে পারবো না।
হাইকোর্টের রায়ের পর এখন কী প্রসিডিউর জানতে চাইলে বুয়েট উপাচার্য সত্য প্রসাদ বলেন, এটি নিয়ে আমরা আমাদের উকিলের সঙ্গে আলোচনা করবো। কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী তো আমাদের চলতে হবে। আমরা তো এই কোর্টকে ভায়োলেট করতে পারবো না। অ্যাজ পার ল আমাদের এগোতে হবে। আর কোর্ট কী রায় দিয়েছে সেটি না দেখে আমি এখন বলতে পারছি না। প্রথমে এটি আমরা দেখবো। এরপর আমাদের লিগাল অ্যাডভাইজারের সঙ্গে কথা বলবো। তার উপদেশ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব। যেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ব্যাঘাত না ঘটে আর রাষ্ট্রীয় মর্যাদাও যেন ক্ষুণ্ন না হয়, দুই দিকেই দেখতে হবে।
বুয়েট শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বির আবাসিক সিট বাতিলের সিদ্ধান্তটি নিয়ম মেনে করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, রাজনীতিমুক্ত থাকার যে সিদ্ধান্তটা ২০১৯ সালে নেওয়া হয়েছিল সে সিদ্ধান্তের একটি রুল অনুযায়ী কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকে বহিষ্কার করা হবে। সে অনুযায়ী কিন্তু ইমতিয়াজ রাব্বির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা সেটি করিনি। আমরা বলেছি, সে পুরোপুরি ইনভল্ভ কিনা সেটি নিয়ে তদন্ত হবে। তারপর সিদ্ধান্ত।
উপাচার্য বলেন, ইতোপূর্বে সে নিজেকে ইনভলভ বলেছিল। কমিটিতে (ছাত্রলীগের কমিটি) তার নাম আসছে। তখন তাকে বলা হয়েছে তুমি নামটা উইথড্রো করো। সে পদত্যাগপত্র দিয়েছে। কিন্তু সেটি এখনও ফাইনাল হয়নি। সে কারণে আমরা তার হলের সিট বাতিল করেছি। অ্যাকোর্ডিং টু রুলস, সে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হতে পারতো। কিন্তু সেটা আমরা করিনি। ২০১৯ সালের যে রুল সেটা আমাকে ফলো করতেই হবে। এটা দেখে দেখেই আমি ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নেবো। হাইকোর্টে গেলে আমি এটিই দেখাবো।
ছাত্ররাজনীতি চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয় বা রাজনৈতিক পরিবেশ ঠিক থাকবে কিনা সেটি জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, এই পরিবেশ ঠিক রাখতে গেলে ছাত্র, শিক্ষক ও আমরা যারা প্রশাসন আছি সবাই মিলে এটিকে ট্রান্সফরমেশন করতে হবে। কীভাবে এটি করা যায় সেটি আলোচনার মাধ্যমে বের করতে হবে।
তিনি বলেন, আগে আমাদের ছিলো ইউকসু। সেটির কার্যক্রম এখন নেই। এখন শিক্ষার্থীরা কী চায়, শিক্ষকরা কী চান সবার মতামত নিয়ে কিছু একটা করতে হবে। আমি একা কিছু করতে চাইলে সেটা কিন্তু ইমপ্লিমেন্ট করা যাবে না। যেটাই করি না কেন সেটি আমার অরডিনেন্সে ইনক্লুড হতে হবে। আর এটার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় চলবে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী। এই অর্ডিন্যান্সের প্রতিটি লাইন বাই লাইন আমাকে মেনে চলতে হবে।
প্রসঙ্গত, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে জারি করা ২০১৯ সালের বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। বুয়েটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রহিম রাব্বির দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (১ এপ্রিল) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন। এর ফলে বুয়েটে রাজনীতি চলতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতনে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ নিহত হন। এর প্রতিবাদে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। এরপর ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। ইমতিয়াজের রিটে এই বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল।