চুয়াডাঙ্গায় পেঁয়াজ সংরক্ষণে এয়ার ফ্লু পদ্ধতি এক যুগান্তকারী উদ্যোগ

এয়ার ফ্লু' মেশিনের মাধ্যেম পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে সাড়া ফেলেছেন চুয়াডাঙ্গার পেঁয়াজ চাষী আশরাফুল। নিজের বসতবাড়িতে একটি ছোট্ট ঘর তৈরি করে তাতে এয়ার ফ্লু মেশিন স্থাপন করে ২'শ মন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছেন তিনি। তার এই প্রযুক্তিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে এলাকার পেঁয়াজ চাষীরা।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হোগরডাঙ্গা গ্রামের পেঁয়াজ চাষী আশরাফুল। প্রতিবছর ৪/৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেন। কিন্ত সংরক্ষণ করতে না পারায় কম দামে বেঁচে দিতে হয় উৎপাদিত পেঁয়াজ। এবার পেঁয়াজ চাষে ভাগ্য ফিরেছে আশরাফুলের। স্থানীয় এনজিও ওয়েভ ফাউন্ডেশন তাকে পেঁয়াজ সংরক্ষণের পদ্ধতি শিখিয়ে প্রযুক্তি ও সহায়তা দিয়েছে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর আর্থিক সহায়তা ও ওয়েভ ফাউন্ডেশন এর কারিগরি তত্ত্বাবধানে "এয়ার ফ্লো" মেশিনভিত্তিক পেঁয়াজ সংরক্ষণ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি কৃষকদের মাঝে আশার আলো জাগিয়েছে।
"এয়ার ফ্লো" মেশিন একটি স্বয়ংক্রিয় বায়ু প্রবাহ ব্যবস্থা, যা পেঁয়াজ সংরক্ষণের ঘরে সর্বোত্তম বায়ুচলাচল নিশ্চিত করে। মেশিনটি ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে, যা পেঁয়াজের অঙ্কুরোদগম ও পচন রোধ করে। কম বিদ্যুৎ খরচে চালানো যায়, যা গ্রামীণ এলাকার জন্য উপযোগী। এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ ৬-৮ মাস পর্যন্ত টাটকা রাখা সম্ভব, যা সাধারণ পদ্ধতির তুলনায় ৩-৪ গুণ বেশি। সংরক্ষণজনিত ক্ষতি কমায়।
চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণে এ পদ্ধতি সম্প্রসারনের আরো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানালেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র সমন্বয়কারী কামরুজ্জামান যুদ্ধ।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণে এটি একটি ভাল পদ্ধতি। পেঁয়াজ চাষ বাড়াতে চাষীদের সব ধরনের প্রনোদনা দেয়া হচ্ছে। তবে পেঁয়াজ সংরক্ষণে সরকারিভাবে এখনও কোন প্রনোদনা বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
দামুড়হুদা উপজেলায় গেল বছর পেঁয়াজের মোট আবাদ হয়েছে ৮৪০হেক্টর জমিতে। মোট ফলন হয়েছে ২৩ হাজার মেট্রিক টন।
বাংলাদেশে পেঁয়াজ কৃষকের আর্থিক নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তবে সংরক্ষণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতি বছর প্রচুর পেঁয়াজ পচনের কারনে নষ্ট হয়ে যায়, যা কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের জন্য ক্ষতির কারণ। এই সমস্যা সমাধানে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর আর্থিক সহায়তা ও ওয়েভ ফাউন্ডেশন এর কারিগরি তত্ত্বাবধানে "এয়ার ফ্লো" মেশিনভিত্তিক পেঁয়াজ সংরক্ষণ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি কৃষকদের মাঝে আশার আলো জাগিয়েছে।
"এয়ার ফ্লো" মেশিন একটি স্বয়ংক্রিয় বায়ু প্রবাহ ব্যবস্থা, যা পেঁয়াজ সংরক্ষণের ঘরে সর্বোত্তম বায়ুচলাচল নিশ্চিত করে। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের কৃষি কর্মকর্তা ফায়সাল মাহমুদ জোয়ার্দার বলেন, "এই প্রযুক্তির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো: মেশিনটি ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে, যা পেঁয়াজের অঙ্কুরোদগম ও পচন রোধ করে। কম বিদ্যুৎ খরচে চালানো যায়, যা গ্রামীণ এলাকার জন্য উপযোগী। এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ ৬-৮ মাস পর্যন্ত টাটকা রাখা সম্ভব, যা সাধারণ পদ্ধতির তুলনায় ৩-৪ গুণ বেশি। সংরক্ষণজনিত ক্ষতি কমায় কৃষকরা মৌসুমের বাইরে উচ্চমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন। দীর্ঘদিন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারায় বিদেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি সম্ভব।
ওয়েভ ফাউন্ডেশন কৃষি ইউনিট প্রকল্পের আওতায় চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা উপজেলায় একটি ইউনিট স্থাপন করেছে। কৃষক মো. আশরাফুল জানান, "এয়ার ফ্লো মেশিন ব্যবহার করে এই বছর আমি অত্যন্ত উপকৃত হয়েছি। অল্প জায়গায় প্রায় ২০০ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পেরেছি। যা আগে ৫০%ই নষ্ট হতো, এবার ৫% ও নষ্ট হয়নি।" পিকেএসএফ এর সহায়তায় ওয়েভ ফাউন্ডেশন এই প্রযুক্তি চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে চায়।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক ও প্রকল্পের ফোকাল পার্সন নির্মল দাস বলেন "এয়ার ফ্লো" মেশিনভিত্তিক পদ্ধতি বাংলাদেশের কৃষি খাতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে সক্ষম। পিকেএসএফ ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের এই যৌথ উদ্যোগ কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা বাড়ালে এই ধরনের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি দেশের কৃষি অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করবে।"
দীর্ঘদিন পেঁয়াজ সংরক্ষণে এয়ার ফ্লো" মেশিনভিত্তিক পদ্ধতি বাংলাদেশের কৃষি খাতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে সক্ষম। এই উদ্যোগ কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা বাড়ালে এই ধরনের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি দেশের কৃষি অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করবে।
Comments