আদরের জমজ দুই সন্তানের ডাকে আর সাড়া দেননি মা জ্যোতি

দাম্পত্য জীবনে জমজ দুই সন্তানের জননী ছিলেন তাসনিম জ্যোতি। দীর্ঘ সময় মায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকা ছোট্ট দুই সন্তান জানে না, যে তাদের মা আর কখনো ফিরে আসবেন না।
জ্যোতির ৮ বছর বয়সী জমজ দুই সন্তান মায়ের কফিন জড়িয়ে কাঁদছিলো আর বলছিল, 'আম্মু ওঠো', 'আম্মু ওঠো'। তবে আদরের দুই সন্তানের ডাকে শেষ বারের মতোও সাড়া দেননি জ্যোতি।
দুই সন্তানের গগন বিদারী আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। কান্নায় ভেঙে পড়ে জ্যোতির স্বজনেরা। জানতো না সন্তানদের শত ডাকেও নীরব থাকা মা আর কখনোই উঠবে না।
ফারিয়া তাসনিম জ্যোতি ছিলেন ঢাকায় একটি ওষুধ কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগের ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার। তিনি চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রয়াত কাউন্সিলর ওলিউল্লাহ আহাম্মদ বাবলুর মেয়ে।
গত রোববার রাতে গাজীপুরের টঙ্গীতে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনে ম্যানহোলে পড়ে নিখোঁজ হন ফারিয়া তাসনিম জ্যোতি। ৩৬ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার সকালে বাঁশপট্টি এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার রাত ৯টায় চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বাগানপাড়া সংলগ্ন পুরাতন জামে মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় জ্যোতিকে। তাকে শেষ বিদায় জানাতে হাজির হন এলাকাবাসী, সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজনসহ শত শত মানুষ।
নিহতের বড় ভাই শোভন বলেন, আমার বোন সারাজীবন সংগ্রাম করে সংসার চালিয়েছে। দুই সন্তানকে মানুষ করার স্বপ্ন ছিল তার। এখন ওরা শুধু মাকে খুঁজছে।
ঢাকার গাজীপুরের টঙ্গীতে ম্যানহোলে পড়ে প্রাণ হারানো ফারিয়া তাসনিম জ্যোতির নিথর দেহ যখন চুয়াডাঙ্গা শহরের বাগানপাড়ার নিজ বাড়িতে পৌঁছায় তখন স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ। জ্যোতির এভাবে মৃত্যু মেনে নিতে পারছেনা এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর দাবী এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়— এটি হত্যার নামান্তর। খোলা ড্রেনের কারণে যেন আর কোনো প্রাণ না ঝরে যায়, এমন মৃত্যুর যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়।
এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু, নগর ব্যবস্থাপনার চরম অব্যবস্থাপনার ভয়াবহ চিত্রই যেন তুলে ধরল। প্রশাসনের দায়িত্বশীল পদক্ষেপ দাবি করছে সচেতন নাগরিকরা।
Comments