নকল মুক্তিযোদ্ধা ফখরুজ্জামান সেজে গুলশানের দুই'শ কোটির প্লট আত্মসাতের অভিযোগ

গুলশানে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দুই'শ কোটি টাকার প্লট আত্মসাৎ করার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। ভাতা প্রাপ্ত এক বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় গোপন করে নকল নাম ধারণ করে প্লটটি আত্মসাতের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন ফখরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি।
এস. এম. ফজলুল কবির নামের এই ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানার কাকচিড়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। পিতার নাম: নুর মোহাম্মদ সিকদার, মাতার নাম: খায়রুননেছা। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রানালয় কর্তৃক প্রকাশিত গেজেট নোটিফাইড তালিকায় তার পরিচিতি নম্বর- ০১০৪০০০০৯৪৪, বেসরকারি গেজেট ক্রমিক নম্বর-১১১৫, সংশ্লিষ্ট এলাকার তালিকায় ক্রমিক নম্বর-১৩৩, সংশ্লিষ্ট এলাকার ঠিকানায় প্রস্তুত ও গৃহীত জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ১৯৪৭০৪১৮৫২৩০০০০০৩।
এই এস.এম. ফজলুল কবির কর্মজীবনে রেডিও বাংলাদেশ এর হিসাব শাখায় চাকরি করতেন। এই সুবাদে ঢাকার মিরপুরে তার বসবাস। বর্তমানে তিনি অবসর জীবন যাপন করছেন। ভাগ্য উন্নয়নে তিনি আত্ম-পরিচয় গোপন করে ফখরুজ্জামান নাম ধারণ করে নকল এন.আই.ডি কার্ড বানিয়ে গুলশান-২ এর এন,ই(এম) ব্লকের ৮৭ নম্বর রোডের ৪ নম্বর প্লটটির ভুয়া মালিক সেজে আত্মৎসাত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছেন।
রাজউকের বরাদ্দ করা দেড় বিঘার এই প্লটটির বর্তমান বাজার মূল্য দুইশত কোটি টাকার উপরে রয়েছে। ফখরুজ্জামান নামে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা এন.আইডি নম্বর-৯১০ ৪৩২ ৯৪৫৪। উল্লেখ্য যে, রাজউকের মালিকানাধীন প্লটটির প্রথম বরাদ্দপ্রাপ্ত মালিকের নাম জাকারিয়া আব্দুস সাত্তার। ১৯৬০ সালে বর্তমানে রাজউক সাবেক ডি.আই.টি থেকে তিনি প্লটটি বরাদ্দ পান। ১৯৬২ সালে তিনি লিজ দলিল রেজিষ্ট্রি পান। তিনি ১৯৭১ সালে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী মো. ফখরুজ্জামান পিতা সোলায়মান নামে এক সিলেটি ভদ্রলোকের সঙ্গে প্লটটি বেচা-বিক্রির বায়না চুক্তিতে আবদ্ধ হন।
দেশ স্বাধীনের পর জাকারিয়া আব্দুস সাত্তারকে খুঁজে পাওয়া না গেলে ১৯৮৭ সালে জনাব ফখরুজ্জামান বায়না চুক্তি মূলে প্লটটি নিজ নামে রেজিষ্ট্রি করার জন্য ঢাকা জেলার প্রথম সাব-জজ আদালতে-৪০৫ নম্বর দেওয়ানী মোকদ্দমা দায়ের করেন। আদালত বিচার প্রক্রিয়া শেষে ১৯৮৯ সালে মো. ফখরুজ্জামানের নামে প্লটটির মালিকানা স্বত্বের ঘোষণা ও ডিক্রী জারী করেন। এবং ০৮/০৬/১৯৮৯ ইং তারিখে কোর্ট নিজ দায়িত্বে ফখরুজ্জামানের নামে সাবকবলা রেজিষ্ট্রি সম্পাদন করে দেন। যাহার রেজিষ্ট্রি নং- ৫৯০৭।
অতঃপর জনাব ফখরুজ্জামান নিয়মানুযায়ী নাম জারীর জন্য রাজউকে আবেদন করেন ও কাগজপত্র জমা দেন। রাজউক কালক্ষেপন করে দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ফেলে দেয়। এই সুযোগে নকল ফখরুজ্জামানদের আগমন ঘটে। কতিপয় অসাধু স্বার্থান্বেষী রাজউক কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে প্রকৃত ও আসল ফখরুজ্জামানের ফাইল ও ছবি সরিয়ে ফেলে নকল ফখরুজ্জামানের ফাইল ও ছবি ঢুকিয়ে দিয়ে প্রসেস করা হয়। এবং রাজউক কর্তৃক সিল মোহর কৃত এই প্রসেসিং ফাইল দেখিয়ে স্বার্থান্বেষীমহল বাজার থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
এই নকল ফখরুজ্জামানের স্রষ্ট্রা ও প্রধান সহযোগী আলাউদ্দিন নামে বরিশালের অন্য এক প্রতারক। তার প্রকৃত ও আসল নাম মো. নুরুল আমিন পিতা- হাবিবুর রহমান। জাতীয় পরিচয়পত্র নং-৬৪৪ ০৫৫ ২৭৬৫। বর্তমানে সে মিরপুর ১ নম্বরের গোদারাঘাট এলাকায় বসবাস করে। নকল ফখরুজ্জামান অর্থাৎ এস.এম. ফজলুল কবিরও অত্র এলাকাতে আলাউদ্দিনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রয়েছে।
জানা গেছে নকল ফখরুজ্জামানকে পুঁজি বানিয়ে উক্ত আলাউদ্দিন সমাজের বিভিন্ন ব্যবসায়ী, বিত্তশীল ও শিল্পপতিদের নিকট থেকে প্লটটির নামজারী ও বেচা-বিক্রির বায়না বাবদ ৩০/৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
অপরদিকে দীর্ঘ রোগ-ভোগ ও অসুস্থ থাকার পর ২০২০ সালে প্রকৃত ও আসল ফখরুজ্জামান মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি এক পুত্র, এক কন্যা ও স্ত্রী রেখে যান। তার স্ত্রীর নাম মিসেস ফাতেমা জামান, পুত্রের নাম হাসান আল আসকারী ফারাজ, কন্যার নাম শারমীন জামান ফারিন।
বর্তমানে তারা ঢাকার মালিবাগ-খিলগাঁও এলাকায় বসবাসরত আছেন। ফখরুজ্জামান এ এলাকাতেই বসবাস করতেন। এই এলাকার ঠিকানাতেই তার সকল প্রকার যোগাযোগ রক্ষা হতো। প্রকুত ও আসল ফখরুজ্জামানের মৃত্যুর পর নকল ফখরুজ্জামানের স্রষ্ট্রা ও গডস ফাদার প্রতারক আলাউদ্দিনের দৌরাত্ম্য অনেক গুণ বেড়ে যায়। সে নানাভাবে প্লটটি আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে মরিয়া হয়ে পড়েছে।
টাকা-পয়সা দিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রাজউকে নামজারীর জোর তদবির ও প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। জানা গেছে যে, নকল ফখরুজ্জামান নামে তৈরি করা ফাইলটি অনুমোদনের জন্য উক্ত আলাউদ্দিন রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মন্ত্রাণালয়ে তদ্বির করছে। অতি সম্প্রতি ২০২১সালে সংশ্লিষ্ট্য মন্ত্রানালয়ে অনুষ্ঠিত সভার প্রতিবেদ রাজউকেরআইন শাখায় প্রেরিত হয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানাগেছে এক ব্যবসায়ী গ্রুপ বিপুল অংকের অর্থের বিনিময়ে আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নকল ফখরুজ্জামানের জালজালিয়াতি পূর্ণ ফাইলটি অনুমোদনের জন্য রাজউক ও মন্ত্রানালয় সহ কোর্ট-কাচারীতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
এ ব্যাপারে প্রকৃত ও আসল ফখরুজ্জামানের স্ত্রী মিসেস ফাতেমা জামান সংশ্লিষ্ট্য দপ্তর, মন্ত্রাণালয় ও রাজউকে অভিযোগ প্রদান করেছেন।
Comments