হঠাৎ ভ্যাটের ব্যাপক বৃদ্ধি
দেশের ভিতরে ভ্রমণে গিয়ে খরচ বাঁচাতে যারা নন-এসি হোটেলে উঠেন তাদের জন্য দু:সংবাদ। এখন থেকে এসব হোটেলে দ্বিগুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট দিতে হবে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক আইনে নতুন যে সংশোধনী এনেছে তার আলোকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। ভ্রমণের ক্ষেত্রে নন-এসি হোটেল সেবার ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। সেটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
খরচ বাড়বে আরও বহু ক্ষেত্রে। রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে খাবারের বিলের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এত দিন শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বা এসি রেস্তোরাঁয় খাবারের বিলের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হতো। সেটিও বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
পোশাক কেনার খরচও বাড়বে। তৈরি পোশাকের আউটলেটের বিলের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। একইভাবে খরচ বাড়বে মিষ্টি কেনায়। মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বোঝাই যাচ্ছে রাজস্ব আহরণে সরকার কাঙ্খিত সাফল্য পাচ্ছে না। তাই চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে হঠাৎই ভ্যাট, সম্পূরক শুল্কসহ বিভিন্ন ধরনের কর বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৪৩ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। যেসব খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসতে যাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো উৎপাদন পর্যায়ে বিস্কুট, আচার, সিআর কয়েল, ম্যাট্রেস, ট্রান্সফরমার, টিস্যু পেপার ইত্যাদি।
একদিকে রাজস্ব আহরণে অসাফল্য, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর চাপেই সরকার জনগণের ওপর করের চাপ বাড়াল। সম্প্রতি ঋণের শর্ত হিসেবে সব পণ্যের ওপর ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ করার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ।
অন্তবর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রভাব রাখবে আরও অনেক ক্ষেত্রে। এখন থেকে ছোট ব্যবসায়ীদেরও টার্নওভার কর দিতে হবে। যে সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক লেনদেন ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা, তাদেরও টার্নওভার কর দিতে হতে পারে বলে জানা গেছে। বর্তমানে ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভারে কর দিতে হয়। নতুন প্রস্তাব অনুসারে, বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকা পেরোলে পণ্য ও সেবা বেচাকেনায় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসতে পারে।
শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবে দাম বাড়বে ফলের রস, তামাকজাত পণ্যসহ বেশ কিছু পণ্যের। মোবাইল ফোনে কথা বলায় (টকটাইম) সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর কথাও আলোচনায় আছে। ভ্রমণেও আবগারী শুল্ক বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
কী প্রভাব পড়বে জনজীবনে?
দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতির চরম ঊর্ধগতি চলছে। নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশে চলে গেছে। সার্বিক মূল্যস্ফীতি দুই অংকের নিচে নামছে না। এ অবস্থায় পরোক্ষ করের এমন সম্প্রসারণ মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের জীবন আরও কঠিন করে তুলবে। ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক অনেক সময়ই বাড়াতে হয় সরকারকে। কিন্তু এত বড় আকার বাড়ানোর প্রস্তাব আগে কখনও দেখা যায়নি। অর্থনীতির সূত্রই বলে যে, ভ্যাট ১০ টাকা বাড়লে পণ্যের দাম ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়।
রাজস্ব বাড়ানোর জন্য পরোক্ষ কর নির্ভরতা জনজীবনকে অস্থির করে রেখেছে। এই প্রস্তাব আরও বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বাজারে। অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য ভ্যাট বাড়ানোর পরিবর্তে সরকারের উচিত প্রত্যক্ষ কর (আয়কর) বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া।