চাঁদপুরে প্রায় ৩ কোটি টাকা সমমূল্যের চিংড়ির রেণু জব্দ

বহিরাগত জেলে এনে চাঁদপুরের হাইমচরের মেঘনা নদীর সম্পদ চিংড়ির রেণু ধ্বংসে বেশ কয়েকটি চক্র মাথা চাড়া দিয়ে উঠলেও প্রশাসনিক অভিযানগুলোতে রেণু পোনা ব্যাতিত কাউকেই আটক করা যাচ্ছেনা। এবার প্রায় ৩ কোটি টাকা সমমূল্যের ৭২ লাখ রেণু চিংড়ি উদ্ধার হলেও শুধুমাত্র ২টি কাঠের ইঞ্জিনচালিত ট্রলারই জব্দ করা সম্ভব হয়েছে।
২৫ মে রোববার রাতে আভিযানিক এমন তথ্যে চরম হতাশা প্রকাশ করেন হাইমচরের উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও ৩নং দক্ষিণ আলগী দূর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সর্দার আব্দুর জলিল।
তিনি জানান, হাইমচরের কাটাখালী, তেলির মোড়, আমতলী, চরভৈরবী, জালিয়ার চরসহ মেঘনার বিভিন্ন চরে সন্ধ্যা নামলেই মশারির মতো ঠেলা জাল নিয়ে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী জেলেরা নদীতে চিংড়ির রেণুপোনাসহ দেশীয় মাছ ধ্বংসে নেমে পড়ার খবর পাচ্ছি। যারা সন্ধ্যা থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চিংড়িসহ দেশীয় মাছ সংগ্রহে ব্যাস্ত থাকছেন। এরপর এরা আশপাশের বাগান ও সুবিধামতো বাড়ীতে বাছাইকৃত রেণু চিংড়িগুলো ড্রামে জমা করে। তারপর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় রেণুগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে ড্রামে ভরে বড় পাইকারদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এসব মাছকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করার জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। যা দক্ষ লোক ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়।
তিনি আরও জানান, অধিকাংশ দক্ষ লোকগুলো যশোর, বাগেরহাট ও খুলনাসহ বাহির হতে সিন্ডিকেট চক্র ভাড়া করে এনে এখানে রেখে অল্প অল্প করে রেণু চিংড়ি মাছ সংগ্রহ করে লাখ লাখ মাছ সংগ্রহের আস্থানা তৈরি করে। পরে জেলেরা রেণুগুলো খুচরা ব্যাবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন এবং পরে খুচরা ব্যবসায়ীরা বড় বড় সিন্ডিকেটের হাতে অবৈধ পন্থায় রেণুগুলো তুলে দিচ্ছে। এতে করে আমাদের হাইমচরের মেঘনা নদীর সম্পদ কোটি কোটি টাকার চিংড়ি মাছ অন্যত্র পাচার হয়ে যাচ্ছে। যেনো দেখার কেউ নেই। প্রশাসন মাঝেমধ্যে গোপন সংবাদে অভিযান করে রেণু চিংড়ি উদ্ধার করায় তাদের ধন্যবাদ জানাই এবং বিএনপি'র দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে এই সিন্ডিকেটের অপকর্মে কেউ জড়িত হলে তাদেরকে যাতে প্রশাসনিক অভিযানে কোন ছাড় দেয়া না হয় সে দাবী জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের হাইমচরের উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, এ ধরণের রেণু চিংড়ি নদীতে জাল দিয়ে ধরা সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা আইন প্রয়োগ করে যতটুকু পারছি রেণু চিংড়ি ধরা ও পাচার রোধ করতে অভিযান চালাচ্ছি। এক্ষেত্রে সর্বমহলের সবার সচেতন হওয়া জরুরী।
এর আগে হাইমচরের নীলকমলের সীমান্তবর্তী এলাকা পেরিয়ে মেঘনা নদীতে পাচারের সময় ৭২ লাখ রেণু চিংড়ি উদ্ধার করে তা শহরের বড়ষ্টেশনের ডাকাতিয়া নদীতে অবমুক্ত করেন চাঁদপুর সদর সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক।
তিনি বলেন, মেঘনা নদীতে ট্রলারে করে চিংড়ির রেনু পাচারের সময় ধাওয়া দিয়ে দুটি ট্রলার আটক করা হয়। পরে ট্রলার থেকে ১৪৫টি ড্রামে থাকা প্রায় ৭২ লাখ চিংড়ির রেণু উদ্ধার ও ট্রলার দু'টি জব্দ করা হয়। তবে আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দুষ্কৃতিরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকেই আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে রেণু চিংড়িগুলো ডাকাতিয়া নদীতে তা অবমুক্ত করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। চিংড়ি রেণুসহ দেশীয় প্রজাতির সকল রেণু পোনা রক্ষায় এই ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
Comments