‘নজু মিয়ার হাট শর হই গিয়ে, শর বিলাত হই গিয়ে’

'বঅত দিন পর গ্রামত আসিদ্দি। ছোড বেলায় এডেই আছিলাম। এডে ওগগো বট গাছ আসিলো; বট গাছর নিচে আড বইসতো, তহন আডত আইসতাম। ছোড বেলার স্মৃতি বিয়াগগিন মনত পরের। এনডে আই ক্লাস থ্রি পর্যন্ত মহাজইন্নে বাপর ইস্কুলুত পড়ালেখা গইজ্জি। ইয়ার পরে আর বাপে আরে শরঅত লইগেইয়িগুই। তারপর আঁর সব পড়ালেখা শরত।'
অর্থাৎ বহুদিন পর গ্রামে এসেছি। ছোটবেলা এখানে ছিলাম। ছোটবেলার সবকিছু এখনও মাথায় রয়ে গেছে। এখানে একটি বটগাছ ছিল; বটগাছের তলে হাট বসতো, তখন হাটে আসতাম। ছোটবেলার সব স্মৃতি মনে পড়ছে। এখানে ক্লাস থ্রি পর্যন্ত মহাজন বাপের স্কুলে পড়াশোনা করেছি। এরপর আমার বাবা আমাকে শহরে নিয়ে যায়। তারপর সব লেখাপড়া শহরে।
১৪ মে বিকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে দীর্ঘ ১৮ বছর পর বাপের ভিটায় পা রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার নিকটাত্মীয় ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে চাটগাঁইয়া (চট্টগ্রামের) ভাষার এসব কথা বলেন।

অন্তবর্তী কালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ১৪ মে বুধবার বিকালে তাঁর পৈত্রিক নিবাস ১৪নম্বর শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে এসে প্রথমে তাঁর দাদা দাদীর কবর জিয়ারত করছেন। তিনি বিকাল পাঁচটায় গ্রামের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে দাদা দাদী ও স্বজনদের কবর জিয়ারত করেন। পরে সংলগ্ন অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠে চার মিনিট চট্টগ্রামের ভাষায় সবাই সালাম দিয়ে সকলে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করে। এরপর ছোট কালের স্মৃতি চারণ করেন। এই সময় তিনি বলেন ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত মাজইন্যা স্কুল লেখা পড়া করেন। এরপর তাঁর বাবা হাজী দুলা মিয়া সওদাগর তাঁকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে গিয়ে সেখানে স্কুলে ভর্তি করে দেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে চট্টগ্রামের ভাষায় বলেন নজু মিয়ারহাট শর হই গিয়ে, শর বিলাত হই গিয়ে। আসলে কথা ঠিক বলে তিনি উল্লেখ করেন। ভবিষ্যতে দেশের আরো উন্নতি হবে বলে মন্তব্য করেন। এই সময় তিনি ছোট কালের দুইটি গ্রাম্য ছড়া বলেন, 'আবদুর রশিদ টেন্ডলের ঠাট, নজু মিয়ার হাট', 'জুনু মিয়ার জালার বারি ফোরক মিয়ার গরুর গাড়ি'। চার মিনিট কাল বক্তব্যে তিনি তাঁর ছোট কালের স্মৃতি চারণ করেন। এই সময় উপস্থিত লোকজন তাঁকে দেশের স্বার্থে পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার দাবি তোলেন। সময় ও নানা বাধ্যবাধকতার কারনে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বে ও বাড়িতে আসতে না পারার কথা ও উল্লেখ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে পাঁচটায় বাড়িতে উপস্থিত হয়ে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত তিনি বাড়িতে ছিলেন।
Comments