কোহলির হাতে উঠলো আইপিএলের অধরা ট্রফি

১৮ বারের চেষ্টায় অবশেষে আইপিএলে প্রথম শিরোপা জিতল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। মঙ্গলবার (৩ জুন) আহমেদাবাদে আইপিএলের ফাইনালে পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে দলটি।
এক দুই তিন চার পাঁচ-গুণে গুণে ১৭ বছরে সতেরোটা আসরে শিরোপাহীন। অবশেষে অষ্টাদশ আসরে এসে শিরোপার দেখা পেল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। নামের পাশে আইপিএলের মুকুট যোগ হলো বিরাট কোহলিরও। নতুন চ্যাম্পিয়ন পেল বিশ্বের জনপ্রিয় এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগটিও।
শুরুতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেটে ১৯০ রান করে বেঙ্গালুরু। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ১৮৪ রানে থামে পাঞ্জাব। কোহলির আরসিবির শিরোপাখরা কাটানোর দিনে অপেক্ষা আরও বাড়ল প্রীতি জিন্তার দলেরও। এ নিয়ে ১৮ বছরে শিরোপার মুকুটহীন তার দলও।
প্রতি আসরেই তারকাবহুল দল গড়েও তেমন সুবিধা করতে পারেনি বেঙ্গালুরু। এর আগে তিনবার শিরোপার খুব কাছাকাছি গিয়েও স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে ফিরতে হয়েছে। এবার আর নতুন কোনো আক্ষেপের গল্প নয়। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে ভারতীয় ক্রিকেট তারকাকে যেন দুহাত ভরে দিলেন সৃষ্টিকর্তাও।
ফাইনালের মহারণের আগে বেঙ্গালুরু অধিনায়ক রজত পাতিদার বারবার বলেছিলেন কোহলির জন্য শিরোপা জিততে চান তারা। মঙ্গলবারের ফাইনালে গোটা দল মিলে যেন সেই প্রতিজ্ঞা নিয়েই নামলেন এবং জিতলেন। কে বলবে বেঙ্গালুরুর ঘরের মাঠে ফাইনাল নয়! আহমেদাবাদ যেন রূপ নিয়েছিল এক টুকরো বেঙ্গালুরুতে। কোহলি কোহলি গর্জনে প্রকম্পিত হয়েছে সারা মাঠ। শেষ বেলায় আবেগ ধরে রাখতে আর পারলেন কই ভারতীয় এই তারকা! চোখের কোনে পানিতে যেন আক্ষেপ মোছনের সেই তৃপ্তি মিশে একাকার।
খেলা শুরুর আগে বড় স্কোরের পিচের আশাই করা হচ্ছিল। তবে টস হেরে বেঙ্গালুরু ব্যাটিংয়ে নামার পর উইকেট যেন কিছুটা মন্থর মনে হচ্ছিল। ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১৮ রানে বিধ্বংসী ইংলিশ ওপেনার ফিল সল্টের উইকেট হারায় বেঙ্গালুরু। দ্বিতীয় উইকেটে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের সঙ্গে ৩৮ রানের জুটি গড়েন কোহলি। ১৮ বলে ২৪ রান করে আগারওয়ালের বিদায়ে ভাঙে সেই জুটিও। ৭ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৬১ রান করে বেঙ্গালুরু।
আসর জুড়ে দারুণ ফর্মে থাকা কোহলি আজ যেন দেখেশুনেই খেললেন। ধীরগতির ব্যাটিংয়ে অন্য প্রান্তে উইকেটের পতন একের পর এক। ১৬ বলে ২৬ রান করে দলীয় ৯৬ রানে আউট হন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক রজত পাতিদার।
৩৫ বলে ৪৩ রান করে কোহলি ফেরেন আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের শিকার হয়ে। কোহলির বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে এসে কিছুটা ঝড় তোলেন জিতেশ শর্মা। তাকে সঙ্গ দিয়েছেন লিয়াম লিভিংস্টোন। পঞ্চম উইকেটে ১২ বলে ৩৬ রানের জুটি গড়েন তারা।
১৭তম ওভারের পঞ্চম বলে ফুলটস বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন লিভিংস্টোন। ১৫ বলে ২৫ রান করে কাইল জেমিসনের শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। ১০ বলে ২৪ রান করা জিতেশও ফেরেন পরের ওভারে।
শেষ ৩ ওভারে কেবল ২২ রান করতে পারে বেঙ্গালুরু। সেটাও সম্ভব হয়েছে শেফার্ডের ৯ বলে ১৭ রানের ইনিংসের কল্যাণে। ইনিংসের শেষ ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়েছেন আর্শদীপ সিং। পাঞ্জাবের হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন আর্শদীপ সিং এবং কাইল জেমিসন।
তাড়ায় শুরুটা ভালোই করে পাঞ্জাব। ওপেনিং জুটিতে প্রবসিমরান সিং এবং প্রিয়ন্স আর্য মিলে ৪৩ রান যোগ করেন। ১৯ বলে ২৪ রান পঞ্চম ওভারের শেষ বলে জশ হ্যাজেলউডের শিকার হয়ে ফেরেন আর্য। পাওয়ারপ্লেতে ৫২ রান করে পাঞ্জাব।
২২ বলে ২৬ রান করে দলীয় ৭২ রানে ফেরেন প্রবসিমরান সিং। তবে পাঞ্জাব সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খায় অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারের উইকেট দ্রুত হারিয়ে। মাত্র ১ রান করে ইনিংসের দশম ওভারে সাজঘরে ফেরেন আইয়ার। ১০ ওভারে পাঞ্জাবের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৮১ রান।
দারুণ ফর্মে থাকা জশ ইংলিস শুরুটা ভালো করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২৩ বলে ৩৯ রান করে দলকে বিপদের মুখে রেখে আউট হন তিনি। নেহাল ওয়াধেরা হাল তো ধরতেই পারেননি, উল্টো ১৮ বলে ১৫ রান করে দলকে বিপদে ফেলেছেন।
মার্কাস স্টয়নিস নিজের খেলা প্রথম বলে ছক্কা মারেন। তখন জয়ের জন্য ২১ বলে ৪৯ দরকার পাঞ্জাবের, হাতে ৫ উইকেট। তবে ভুবনেশ্বর কুমারের পরের বলে আউট হয় দলকে হারের দিকে ঠেলে দিয়ে যান অজি এই অলরাউন্ডার। শেষদিকে একাই চেষ্টা করেছেন শশাঙ্ক সিং। তবে ৩০ বলে ৬ ছক্কা ও ৩ চারে তার ৬১ রানের ইনিংস আক্ষেপই বাড়িয়েছে পাঞ্জাবের।
বেঙ্গালুরুর হয়ে ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে ম্যাচ উইনিং বোলিং করেছেন ক্রুনাল পান্ডিয়া। ২ উইকেট নিয়েছেন ভুবনেশ্বর কুমার।
Comments