কমিশনারের নির্দেশনা ফাঁসকারী পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের একটি 'কড়া' নির্দেশনা ফাঁসের ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল অমি দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রবিবার (১৭ আগস্ট) দিবাগত রাতে খুলশী থানা পুলিশ তাকে আটক করে। তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃত অমি দাশ পুলিশের টেলিকম ইউনিটের সদস্য ছিলেন এবং প্রেষণে খুলশী থানায় কর্মরত ছিলেন। তার পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায়। তার পিতার নাম রাজিব দাশ।
গত ১২ আগস্ট ওয়াকিটকি বার্তার মাধ্যমে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ সকল পুলিশ সদস্যকে অস্ত্রধারীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের একদল নেতাকর্মীর হাতে বন্দর থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) গুরুতর আহত হওয়ার পর। কমিশনারের এই গোপন বার্তা একজন কর্মকর্তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। গোপন নির্দেশনা ফাঁস হওয়ায় শীর্ষ কর্মকর্তারা ব্যাপক তদন্ত শুরু করেন। তদন্তে অমি দাশকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।
১১ আগস্ট দিবাগত রাত ২টার দিকে সল্টগোলা ক্রসিংয়ের ইশান মিস্ত্রি হাট সংলগ্ন সড়কে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মিছিল চলাকালে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক আবু সাঈদ মারাত্মকভাবে আহত হন। পরদিন রাতে ওয়্যারলেসে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ সকল পুলিশ সদস্যকে বলেন, '২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে যেসব ইউনিটকে অস্ত্র বহনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তারা থানার মোবাইল পার্টি, পেট্রোল পার্টি, ডিবি টিম ও অন্যান্য বাহিনীকে অবশ্যই অস্ত্রসহ ডিউটিতে যেতে হবে। কোনো পেট্রোল পার্টি, মোবাইল পার্টি বা চেকপোস্ট টিম আগ্নেয়াস্ত্র ও লাইভ গোলাবারুদ ছাড়া বের হবে না। প্রত্যেককে প্রাপ্ত অনুমতি অনুযায়ী অস্ত্র, গোলাবারুদ ও প্রটেক্টিভ গিয়ার পরে ডিউটিতে অংশ নিতে হবে।'
তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, 'রবার বুলেট দিয়ে আর কাজ হচ্ছে না। বন্দর থানার একজন এসআই গুরুতর আহত হয়েছেন। ভবিষ্যতে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারে। বন্দর থানার অফিসার যে পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, তা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। কোনো টহলদল যেন লাশ হয়ে ফিরে না আসে। কোনো টহল পার্টির সামনে কেউ অস্ত্র বের করলে-সেটা ধারালো অস্ত্র হোক বা আগ্নেয়াস্ত্র-তাৎক্ষণিকভাবে গুলি করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকা চলবে না। দণ্ডবিধির ৯৬ থেকে ১০৬ ধারা অনুযায়ী প্রতিটি পুলিশ কর্মীর আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো রকম দ্বিধা করা যাবে না। সরকারি গোলাবারুদ সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।'
এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের অভ্যন্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গোপন নির্দেশনা ফাঁসের এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরও তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে।
Comments