মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর প্রাকৃতিক উপায়

মাইগ্রেন একটি তীব্র মাথাব্যথা, যা সাধারণত মাথার এক পাশে হয় এবং সঙ্গে থাকে বমিভাব, আলো ও শব্দে অতিসংবেদনশীলতা। যদিও মাইগ্রেনের চিকিৎসায় ওষুধ ব্যবহৃত হয়, তবে ঘরোয়া কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে ব্যথা উপশম ও প্রতিরোধ সম্ভব।
নিয়মিত পানি পান, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, ঘুমের মান উন্নয়ন, এবং হারবাল প্রতিকার এসব সহজ পরিবর্তন মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে ১২টি প্রাকৃতিক উপায়:
১. পানির ঘাটতি
শরীরে পানির ঘাটতি (ডিহাইড্রেশন) মাইগ্রেনের অন্যতম বড় কারণ। প্রতিদিন অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন। চাইলে ডাবের পানি বা হারবাল চা খেতে পারেন, যা ইলেকট্রোলাইট সরবরাহে সাহায্য করে।
২. ঠাণ্ডা বা গরম সেঁক ব্যবহার
পেশিতে চাপ বা রক্তনালীর সংকোচন উপশমে কপালে ঠাণ্ডা কমপ্রেস বা গলায় গরম প্যাড ব্যবহার করুন। ঠাণ্ডা সেঁকে ব্যথা কমে, আর গরম সেঁকে পেশির টান কমে।
৩. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
স্ট্রেস মাইগ্রেনের অন্যতম ট্রিগার। নিয়মিত মেডিটেশন, গভীর শ্বাস প্রশ্বাস ও রিল্যাক্সেশন এক্সারসাইজ কর্টিসল হরমোন কমিয়ে স্নায়ু শান্ত করে।
৪. ঘুমের মান উন্নত করুন
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মাইগ্রেন হতে পারে। প্রতিদিন ৭–৯ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুমানোর আগে মোবাইল-স্ক্রিন এড়িয়ে, ঘর অন্ধকার ও ঠাণ্ডা রাখুন।
৫. হারবাল প্রতিকার ব্যবহার করুন
আদা ব্যথা ও বমি কমাতে সাহায্য করে। আদা চা বা ক্যাপসুল খাওয়া যেতে পারে। পিপারমিন্ট অয়েল কপালে ঘষলে ঠাণ্ডা ভাব দেয়, যা ব্যথা কমায়। ল্যাভেন্ডার অয়েল ঘ্রাণ হিসেবে বা ডিফিউজারে ব্যবহার করুন।
৬. নিয়মিত সুষম খাবার খান
খাবার বাদ দিলে রক্তে শর্করা কমে মাইগ্রেন বাড়ে। প্রতি ৩-৪ ঘণ্টা পরপর খাওয়ার অভ্যাস করুন। সুষম খাদ্যগ্রহণে শস্য, প্রোটিন ও ভালো চর্বি রাখুন। চকলেট, পুরনো চিজ, কৃত্রিম সুইটনার এসব এড়িয়ে চলুন।
৭. ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট নিন
ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ু শান্ত করে ও রক্তনালী প্রসারিত করে মাইগ্রেন কমায়।
ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্ল্যাভিন) ও CoQ10, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড স্নায়ুবিক কার্যকারিতা উন্নত করে। তবে সাপ্লিমেন্ট নেয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৮. ট্রিগার শনাক্ত ও এড়িয়ে চলা
মাইগ্রেন ডায়েরি রাখুন কি খাচ্ছেন, ঘুম, স্ট্রেস, পরিবেশ কেমন ছিল সব লিখে রাখুন। সাধারণ ট্রিগার: অ্যালকোহল, ক্যাফেইন, প্রক্রিয়াজাত খাবার, আবহাওয়ার পরিবর্তন ইত্যাদি।
৯. হালকা ব্যায়াম করুন
নিয়মিত ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ঘুম ভালো করে এবং স্ট্রেস কমায়। হাঁটা, যোগব্যায়াম বা সাঁতার ভালো বিকল্প। যোগব্যায়াম মাইগ্রেনের তীব্রতা ও ঘনত্ব কমায় বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
১০. অ্যাকুপ্রেশার ও আকুপাংচার
হাতে ও শরীরের নির্দিষ্ট পয়েন্টে চাপ প্রয়োগে (যেমন—আঙ্গুলের মাঝখানের LI-4 পয়েন্টে চাপ) ব্যথা কমে। আকুপাংচারে সূচ ঢুকিয়ে শক্তি প্রবাহ উন্নত করে মাইগ্রেনের সংখ্যা হ্রাস করা যায়।
১১. গরম পানিতে পা ভেজানো
প্রাচীন এক পদ্ধতি পায়ের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে মাথার চাপ কমাতে সাহায্য করে। পানিতে ল্যাভেন্ডার বা পিপারমিন্ট অয়েল দিলে অতিরিক্ত স্বস্তি মেলে।
১২. স্ক্রিন টাইম ও ব্লু লাইট কমান
দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে মাইগ্রেন বাড়ে। '২০-২০-২০ নিয়ম' অনুসরণ করুন ২০ মিনিট পরপর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরে তাকান। মোবাইল, কম্পিউটার ব্যবহার কমান, বিশেষ করে ঘুমের আগে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
Comments