ইউনূস-তারেক বৈঠক থেকে কি পেলো জনগণ? প্রশ্ন ফরহাদ মজহারের

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের সমালোচনা করেছেন কবি ও রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি এ নিয়ে ১৬ জুন একটি ফেসবুক পোস্ট করেন। তিনি প্রশ্ন তুলেন এই বৈঠক থেকে জনগণ কি পেলেন? নিচে তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরে হলা।
প্রশ্ন: প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের মধ্যে একান্ত বৈঠক থেকে বাংলাদেশের সধারণ জনগণ কি বার্তা পেল?
তারা খুবই ভাল বার্তা পেয়েছে। বার্তাটা হচ্ছে, জনগণের শুধু ভোটের অধিকার আছে আর কোন অধিকার নাই। তাই কবে নির্বাচন হবে সেটাই ছিল আলোচনার একমাত্র ইস্যু।
জনগণ শুধু কয়েক বছর পর পর কে তাদের লুটপাট করবে এবং কারা দেশের নয় পরাশক্তির স্বার্থে দেশ পরিচালনা করবে তাদের 'ভোট' দিয়ে 'নির্বাচিত' করে ক্ষমতায় বসাবার অধিকারী। উৎসবের সঙ্গে নির্বাচন আর 'ভোট' দেওয়া ছাড়া রাজনৈতিক-আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক কিংবা অন্য কোন বিষয়ে নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের কোন অধিকার জনগণের নাই। ভোটবাদী রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে কি চোখে দেখে তার দ্বারা সেটা বোঝা যায়।
প্রশ্ন: গণঅভ্যুত্থানে হাজারের অধিক মানুষের শহীদ হওয়া এবং পঙ্গু হয়ে থাকাদের আত্মত্যাগ কি তাহলে বৃথা?
না। বৃথা কেন হবে? লন্ডনের বার্তা হোল ভোটের জন্যই তারা জীবন দিয়েছে। জনগণ ভোট চেয়েছে ভোট পাবে। ডিসেম্বরে না হলে ফেব্রুয়ারিতে। জয় বাংলা!!
প্রশ্নঃ বিচার বা সংস্কার কিছুই কি হবে না?
দরকার কি? কারন নির্বাচন করতে হলে যারা জনগণের ওপর গুলি চালিয়েছে তাদেরকেই তো লাগবে? তারা ছাড়া নির্বাচন হবে কীভাবে? নভেম্বরের পর থেকেই আইনশৃংখলা পরিস্থিতির যে অবনতি হবে তার সামাল দেবে কে? আর সংস্কার করলে লুটপাট হবে কিভাবে? কিসের সংস্কার!!!
প্রশ্ন: সুষ্ঠ নির্বাচন কি সম্ভব?
দেখুন বাংলাদেশের এখন যে অবস্থা তাতে সুষ্ঠ নির্বাচন অসম্ভব ব্যাপার। তাছাড়া সুষ্ঠ নির্বাচন দরকারই বা কি? দরকার দুই তৃতীয়াংশ সদস্যকে জিতিয়ে এনে অন্তর্বর্তী উপদেষ্টা সরকারকে বৈধ করা। সেটা ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী Retroactive পাস করে আনা। সেটা তো করতে হবে, তাই না? এই কাজ অতীতেও হয়েছে। সেনাবাহিনী ছাড়া এই মহৎ কাজটা করবে কে? পুলিশ বাহিনী তো আর আগের মতো নাই। তাই না?
প্রশ্ন: এতে কি সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠান হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
অবশ্যই। সেনানিবাসের বাইরে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা সবসময়ই বিপজ্জনক। আগামি লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণির নির্বাচনে টাকা পয়সার ছড়াছড়ি হবে প্রচুর। সেনাবাহিনীকে দুর্নীতি থেকে মুক্ত রাখা কঠিন হবে। দ্বিতীয়ত সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনগণের ব্যবধান বাড়বে। এতো বিশাল আত্মত্যাগের পর কোন সংস্কার ও বিচার ছাড়া বির্বাচন সমাজে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত তৈরি করবে। এর ভোটবাদী রাজনৈতিক দল ছাড়াও প্রধানত বর্তাবে সেনাবাহিনীর ওপর। কারণ ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি সেনাবাহিনীর তরফ থেকেই এসেছে।
প্রশ্নঃ রাজনৈতিকদলের ক্ষতি হবে না?
রাজনৈতিক দল ভোট চেয়েছে ভোট পাবে। তাদের কাছে রাষ্ট্র ক্ষমতা হচ্ছে সহজ লুন্ঠন ক্ষেত্র। তারা ক্ষমতা চায়, ক্ষমতায় যাবে। কিন্তু সেনাবাহিনী স্বেচ্ছায় যে দায় মাথায় তুলে নিল, সেই ভার নামাবে কি ভাবে?
ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। আমরা আরও অস্থির ও অস্থিতিশীল অবস্থার দিকে ছুটে যাচ্ছি ।
Comments