টানা চারদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়

টানা চারদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে দক্ষিন-পশ্চিমের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায়। অতি তাপপ্রবাহে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। দাবদাহে প্রানীকূলেও স্বস্তি নেই। খাঁ খাঁ করছে চারদিক।
আজ রবিবার (১১ মে) বেলা তিনটায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৬%। এর আগে দুপুর ১২ টায় চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৩৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৩১%। শনিবার (১০ মে) বিকেল ৩ টায় এ জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন দুপুর ১২ টায় চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার (৯ মে) চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা লিপিবদ্ধ হয়েছে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চারদিন ধরে তীব্র অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এ জেলায়। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জেলার মানুষ। রোদের প্রখর তেজ আর অসহ্য গরমে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। ভ্যান চালক কোরবান আলী রোদে আর ভ্যান চালাতে না পেরে আম গাছের ছায়ায় ভ্যানের উপরেই শরীরটা এলিয়ে ঘুমিয়ে গেছেন। এ সময় প্যাসেঞ্জার হচ্ছে না। তার উপার্জনেও চারদিন ধরে ভাটা পড়ছে। বিক্রয় কর্মী সিয়াম ও শাকিল ডেলিভারি কাজ রেখে গাছতলায় জিরচ্ছে।
ইজিবাইক চালক হাবিবুর জানান, তীব্র রোদে মানুষ বাইরে বের হচ্ছে কম। গাড়ী নিয়ে স্ট্যান্ডে আছি। আয়-ইনকাম একদম কমে গেছে। সমিতির ঋন নিয়ে গাড়ী কিনেছি। চলতি সপ্তায় কিস্তি দিতে পারিনি।
এদিকে কৃষি সমৃদ্ধ এ জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহে ক্ষতিতে পড়েছে কৃষকরা। প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে সবজি ক্ষেতে। আউশ ধান রোপন মওসুমে এ সময় অন্যান্য বছর বৃষ্টি হয়। এবার বৃষ্টির দেখা নেই। উল্টো তাপপ্রবাহ বইছে। কৃষক আহমদ আলী বলেন, রোদ-গরমে মাঠে দাঁড়ানোর কায়দা নেই। ক্ষেতে পানি (সেচ) দিতে দিতে শেষ হয়ে গেলাম।

অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত সুর্যের তীব্র তেঁজে পুড়ছে প্রকৃতি। দুপুরের রোদে যেন আগুনের ফুলকি ঝরছে। যেন মরুভূমির তাপমাত্রা। দুপুর ১২ টার রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। দিনে পাশাপাশি রাতের তাপমাত্রাও বাড়ছে।
এর আগে চলতি গ্ৰীস্ম মৌসুমে ২৩ ও ২৪ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যথাক্রমে ৩৬ দশমিক ৬ এবং ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অতি দাবদাহে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়াও হীট স্ট্রক এড়াতে বেশি বেশি পানি পানসহ লেবুর শরবত খেতে বলছেন। তবে রাস্তার পাশে খোলা শরবত খেতে বারন করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়াএ চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন থেকেও অতি দাবদাহে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, ১৩ মে পর্যন্ত এ রকম তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে। ১৪ তারিখ বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে। তারপর তাপমাত্রা কমতে পারে। তবে এ মুহূর্তে এক পশলা বৃষ্টির প্রত্যাশা করছে এ জেলার মানুষের।
Comments