কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তে পতনের গহ্বরে পুঁজিবাজার

টানা পতনের মধ্যেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সিদ্ধান্তে আজ বুধবার পুঁজিবাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে প্রায় ৬৩ পয়েন্ট। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা ও আতঙ্ক আরও ঘনীভূত হয়েছে।
এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত, যেখানে তালিকাভুক্ত ১৮টি ব্যাংককে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়া অর্থবছরের জন্য কোনো ধরনের ডিভিডেন্ড (নগদ বা বোনাস) না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দুর্বল এবং প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে, ফলে তারা শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড প্রদানে সক্ষম নয়।
ব্যাংক খাত পুঁজিবাজারের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। এই খাতের শেয়ারগুলোর দরপতনের কারণে বাজারের সামগ্রিক সূচকও নিচে নেমে গেছে। এর ফলে শুধু ব্যাংক খাত নয়, অন্যান্য খাতেও বিক্রির চাপ তৈরি হয়েছে।
পুঁজিবাজারে গত এক সপ্তাহে টানা ছয় কর্মদিবস ধরে সূচক কমেছে। ছয় দিনে মোট সূচক কমেছে ১৮৯ পয়েন্ট। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটা বড় ধরনের দু:সংবাদ। কারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক খাতের শেয়ারে আস্থার সাথে বিনিয়োগ করেন। এই খবর তাদের জন্য বড় ধাক্কা। যারা ব্যাংক খাতের শেয়ারে ডিভিডেন্ড প্রত্যাশায় বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ডিভিডেন্ড না পেলে বিনিয়োগের প্রবণতা কমে যায় এবং আস্থাও দুর্বল হয়। এ খাত থেকে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এতে পুঁজিবাজারে নগদ প্রবাহ কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত হয়তো ব্যাংকিং খাতের আর্থিক শৃঙ্খলা আনতে সহায়ক হবে। কিন্তু শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন ধরে নানাবিধ চাপের মধ্যে রয়েছে। এখন এ ধরনের কঠোর নির্দেশনা বাজারে আরও অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। তাই দ্রুত নীতিগত সমন্বয় ও বাস্তবসম্মত করণীয় গ্রহণের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনাই হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মূল লক্ষ্য।
আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০২০ সালের ১১ আগস্টের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে গেছে। অর্থাৎ আজকের সূচকটি বিগত ৪ বছর সাড়ে ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের ১০ আগস্ট সূচকটি আজকের তুলনায় কম ছিল। ওইদিন ডিএসইএক্স ছিল ৪ হাজার ৫৩৩ পয়েন্টে।আজ ডিএসইএক্স ৬২.৭৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬১৫ পয়েন্টে।
এদিন ডিএসইতে ২৬৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৭২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আজ লেনদেন কমেছে ৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বা ৩ শতাংশ।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৩টির বা ১৫.৮৩ শতাংশের, কমেছে ২৯৫টির বা ৭৪.১২ শতাংশের এবং দর পরিবর্তন হয়নি ৪০টির বা ১০.০৫ শতাংশের।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইতে আজ ১৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগেরদিন লেনদেন হয়েছিল ১০ কোটি ১২ লাখ টাকার এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৯৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৮টির, কমেছে ১৩৮টির এবং পরিবর্তন হয়নি ১৮টির।
এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩০২৫ পয়েন্টে। আগেরদিন সিএএসপিআইর সূচক কমেছিল ৫০ পয়েন্ট।
Comments