দর্শনার কেরুজ কান্ট্রি স্পিরিট বোতলজাত করায় ভেজালকারীদের লঙ্কাকান্ড

দেশের সর্ববৃহৎ চিনি শিল্প কমপ্লেক্স ও চুয়াডাঙ্গার একমাত্র রাষ্ট্রায়াত্ব শিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনার কেরু এ্যান্ড কোম্পানী সদ্য বিদায়ী অর্থ বছরে সর্বোচ্চ ১১৫-২০ কোটি টাকার মুনাফা করতে যাচ্ছে। আর এই লাভের পুরাটাই আসছে সরকারী একমাত্র ডিষ্টিলারী থেকে।
কেরু এ্যান্ড কোম্পানী চিনিকল নামে খ্যাত হলেও মূলতঃ চিনি কারখানা, বাণিজ্যিক খামার, জৈব সার কারখানা ও ডিষ্টিলারী নিয়ে গঠিত। এরমধ্যে পর্যাপ্ত আখ চাষ না পাওয়ায় চিনিকারখানায় লোকসান হলেও বাকী গুলো লাভ করে আসছে। কোম্পানির প্রধান পণ্য চিনি হলেও আখ থেকে চিনি নিষ্কাশন করার পর চিটাগুড় থেকে অন্যান্য উপকরণও (বাই-প্রোডাক্ট) উৎপাদন করা হয়, যেমন- মদ, ভিনেগার, স্পিরিট এবং জৈব সার। প্রতিষ্ঠানটি কান্ট্রি স্পিরিট, ফরেন লিকার, ডিনেচার স্পিরিট এবং রেক্টিফাইট স্পিরিট উৎপাদন করে থাকে। পাশাপাশি মল্ট ভিনেগার এবং সাদা ভিনেগারও তৈরি করে। কেরুর কারখানাগুলোর সম্মিলিত বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১.৩৫ কোটি প্রুফ লিটার।
কেরু কোম্পানির ডিস্টিলারি ইউনিটে রয়েছে ৯ প্রকারের মদ- ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্রান্ডি, চেরি ব্রাান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম এবং ওল্ড রাম।
১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানী গত ২২ মে প্রথমবারের মতো দেশী মদ নামে খ্যাত কান্ট্রি স্পিরিট বোতলজাত করে বিপনন শুরু করে। এতে করে এতো দিনে অবৈধ সুবিধাভোগীরা যারা প্রতি ড্রামে দ্বিগুন/তিনগুন পানি মিশিয়ে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে তাদের অবৈধ আয়ের উৎসে টান লাগায় এ প্রক্রিয়া বন্ধ করার পায়তারা করছে। পণ্যাগারগুলোর এই অবৈধ অর্থেই চলে কেরু কোম্পানীর রাজকীয় সিবিএ নির্বাচন ও কতিপয় কর্মকর্তা/কর্মচারীর শাহী জীবনযাপন। বর্তমান উদ্যোগ সফল হলে কিছুটা হলেও পণ্যাগারের পোস্টিং নিয়ে অর্থবানিজ্য আর ক্ষমতার দাপট কমবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছে।
রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশন ( BNACWC) এর সুপারিশক্রমে শিল্প উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদনক্রমে বোটলিং কার্যক্রম চালু হলেও অভিযোগ রয়েছে, কয়েক মাস আগে বর্তমান প্রশাসন কান্ট্রি স্পিরিট প্লাস্টিক বোতলে ভরে বিক্রির উদ্যোগ নিলে পরিবেশ অধিদপ্তরকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এমপি আলী আজগার টগরের নিয়োগকৃত কতিপয় এজেন্ট সে উদ্যোগ স্থগিত করে দেয়। সিদ্ধান্তে অটল থাকা প্রশাসন সেসব বাধা মাড়িয়ে গত ২২ মে পার্বতীপুর ওয়ার হাউজে প্রথম চালান পরে পর্যায়ক্রমে সকল পণ্যাগারে পূর্বের ড্রাম পদ্ধতির পরিবর্তে বোতলজাত করে সরবরাহ শুরু হয়। এছাড়া ফরেন লিকার বাজারে চাহিদার প্রেক্ষিতে বিক্রয়ের তারতম্য হলেও মুনাফা বেশী হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে- আওয়ামী রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত কোটি কোটি টাকার মালিক কয়েকজন এজেন্ট এবং কর্মচারীকে সম্প্রতি সময়ে করপোরেশন কেরু থেকে অন্যত্র বদলী করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে স্থানীয় ও কিছু জাতীয় পত্রিকায় একই ড্রাফটে লেখা ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে প্রকাশ করে যাচ্ছে।
কেরুতে বিদায়ী অর্থ বছরে ডিস্টিলারীতে রিকোভারী বৃদ্ধি, ভিনেগারের বিক্রয় বৃদ্ধি, চিনির রিকোভারী বৃদ্ধি, জৈব সারের উৎপাদন বৃদ্ধি, আখের রোপন বৃদ্ধি পেলেও আওয়ামী সিন্ডিকেটটি জেলার একমাত্র রাষ্ট্রায়াত্ব শিল্প কমপ্লেক্সটির ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে, এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত হলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বিক হাসান বাংলাদেশ বার্তাকে জানান- কেরুর ইতিহাসে এবার সর্বাধিক মুনাফা হবে। আলোচিত সিএস বোটলিং করায় এজেন্টদের পরিবর্তে কোম্পানী লাভবান হবে, এক্ষেত্রে সকল বিধি মেনে বোতলের অনুমোদন ও টেন্ডার প্রক্রিয়া শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে। বিক্রয় কেন্দ্রে নিযুক্ত কর্মচারীদের কর্পোরেশন বদলী করলেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে। দর্শনা ডিস্টিলারীতে কর্মরত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ছানোয়ার হোসেনকে ঝালকাটিতে বদলী করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, এখানে আমার হাত নেই। একটি স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করছে। যেসব অভিযোগ আসছে তা কাল্পনিক-ভিত্তিহীন। আমার কাছে যথাযথ ডকুমেন্ট আছে। তদন্ত শুরু হলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করবো।
Comments