নীলফামারীর ৩০ ইউপিতে অকেজো সার্ভার, মোবাইল ডেটায় সেবা

গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য ফাইবার অপটিক তারের মাধ্যমে নীলফামারী জেলার ৩০টি ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য, সেবা ও ডিজিটাল কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সেবা কেন্দ্রে সুবিধাভোগীদের ৩০ ধরনের সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও সংযোগের দুই বছরের মাথায় সার্ভারটি বন্ধ থাকায় ব্যাহত হচ্ছে সেবা। অকেজো হয়ে পড়ে আছে যন্ত্রাংশ, সুবিধাভোগীদের কাজে আসছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নীলফামারী জেলার ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য, সেবা ও ডিজিটাল কেন্দ্রটি বেহাল। তথ্য, সেবা ও ডিজিটাল কেন্দ্রের ফাইবার হোমগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কোথাও ফাইবার তার কাটার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে ইন্টারনেট সংযোগ। ব্যাটারিসহ মূল্যবান এই যন্ত্রাংশে মাকড়সার জাল ছড়িয়ে পড়েছে, জমেছে ধুলার আস্তর। দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার কারণে তথ্য কেন্দ্রের উদ্যোক্তারা মডেম ও মোবাইল ডাটা ব্যবহার করে সেবা দিচ্ছেন।
এদিকে সুবিধাভোগীদের জন্মনিবন্ধন, মৃত্যুনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, কৃষিবিষয়ক তথ্য, শিক্ষাবিষয়ক তথ্য, চাকরির তথ্য, ভূমিবিষয়ক তথ্যসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও মিলছে মাত্র দুই থেকে তিন ধরনের সেবা। ১০ মিনিটের কাজ করতে সময় লাগছে আধা ঘণ্টার বেশি। এতে সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি যেমন বেড়েছে, তেমনি বাড়তি টাকা ব্যয় হচ্ছে উদ্যোক্তাদের।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন ইনফো-সরকার প্রকল্প-৩ (পর্যায়)-এর আওতায় ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়।
অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফাইবার অপটিকের তারের মাধ্যমে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে জেলার ৬০টি ইউনিয়নের মধ্যে জেলা সদর, ডোমার ও সৈয়দপুর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে ২০১৬ সালে তথ্য, সেবা ও ডিজিটাল কেন্দ্রে দেওয়া হয় দুই এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সংযোগ। উদ্দেশ্য ছিল দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত দ্রুতগতির ইন্টারনেট এবং তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছে দেওয়া। একই সঙ্গে গ্রামীণ জনগণের জন্য ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারিত করা। পাশাপাশি লক্ষ্য ছিল ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তর, বিদ্যালয়, কলেজ, গ্রোথ সেন্টার ও অন্য সরকারি কার্যালয়গুলোয় নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপন করে এই অঞ্চলের ১০ লাখ মানুষের কাছে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। তবে সংযোগের এক দুই বছর ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা গেলেও বর্তমানে এই প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
সংগলশী সদর ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের সেবাগ্রহীতা আব্দুর রহমান বলেন, 'সন্তানের জন্মসনদ সংশোধন করার জন্য এসেছি। সকাল ১০টা থেকে বসে আছি। এখন বেলা ৩টা বাজে। এখনো কাজ শেষ হয়নি।' তিনি বলেন, 'মোবাইল ডেটা দিয়ে কাজ করছেন উদ্যোক্তা। ইন্টানেটের ধীরগতির কারণে সময়মতো সেবা পাচ্ছি না। সার্ভারটি ঠিক করা হলে আমাদের ভোগান্তি অনেকটা কমে আসবে।
চাপড়া সরমজানি ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের সেবা নিতে আসা মোছা. জেরিন সুলতানা বলেন, 'আমি এখানে দুই দিন এসেছি। সময়মতো কাজ না হওয়ায় ফিরে যাচ্ছি। কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মোবাইল ডেটার মাধ্যমে সেবা দিচ্ছেন। এতে অনেক সময় লাগছে। সার্ভারটি বন্ধ কেন, বিষয়টি জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বলেন, তিনি ৩ বছর ধরে এখানে সেবা দিয়ে আসছেন। আসার পর থেকেই নাকি সার্ভারটি নষ্ট দেখছেন।
কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, 'দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সার্ভার রুমটি বন্ধ আছে। এটি চালু থাকলে গ্রাহকদের দ্রুত অনলাইন সেবা দিতে পারতাম। একটি কাজ করতে অনেক সময় লাগে।' তিনি আরও বলেন, 'অনেক সময় মোবাইল ডেটা কাজ করে না। মডেম ব্যবহার করে কাজ করতে হয়। এতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সার্ভারটি সচল করা হলে দ্রুত কাজ করা যাবে। গ্রাহকদেরও ভোগান্তি কমবে।
ডোমার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের জিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা মো. আশকার আহমেদ বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনেকবার অভিযোগ দিয়েও কাজ হয়নি। এটি এখন গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে নিজের টাকা খরচ করে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়েছি। সেটা দিয়েই গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছি। এতে প্রতি মাসে আমাকে ৮০০ টাকা বিল দিতে হচ্ছে। সার্ভারটি মেরামত করার জন্য বিটিসিএল অফিসে অভিযোগ করে কোনো সুরাহা মেলেনি।
সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুন বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে সার্ভারটি নষ্ট থাকায় সেবা নিতে আসা মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। সেটি আবারও সচল করা হলে আর্থিকভাবে উদ্যোক্তারা লাভবান হবেন।'
বিটিসিএল সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম বিষ্ণু চন্দ্র রায় বলেন, 'রাস্তা সংস্কারকাজের সময় মাটির নিচের অনেক ফাইবার তার কাটা পড়েছে। আমরা সার্ভারগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করে আবারও সচল করার উদ্যোগ নিয়েছি।
Comments