যুক্তরাষ্ট্রকে কি বাণিজ্য সুবিধা দেওয়া যায় ভাবছে সরকার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আঘাতের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছে সরকার এবং বেসরকারি খাত। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, এটি বাংলাদেশের জন্য অনাকাঙ্খিত ধাক্কা। রপ্তানিকারকরা প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন। সবার মনেই প্রশ্ন তাহলে কী করতে হবে বাংলাদেশকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য নিজেই কিছুটা পথ বাতলে দিয়েছেন। বলেছেন, শুল্কের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে দেশগুলিকে এমন কিছু আমেরিকাকে দিতে হবে, যা এর আগে পাওয়া যায়নি। আমেরিকার জন্য কোন দেশ অভূতপূর্ব কিছু করলেই তাকে শুল্কে ছাড় দেবেন ট্রাম্প।
তাই বাংলাদেশের এখন ভাবনা সেখানেই। আমেরিকা থেকে আমদানি বাড়াতে হবে, কারণ ট্রাম্প ট্যারিফের মূল উদ্দেশ্যই হলো তার দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো। বাংলাদেশ সরকার আমদানি নীতিতে পরিবর্তন এনে অ-শুল্ক বাধা তুলে দেওয়ার কথা চিন্তা করছে, যাতে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি সহজ হয়। পাশাপাশি বিনিয়োগ ও অন্যান্য ব্যবসা সহজ করারও উদ্যোগ নেবে সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত নতুন নীতির আওতায় বাংলাদেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। নতুন এ শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে তা হলো, এই ট্যারিফ আরোপ করায় আমেরিকার অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে। পণ্যের দাম বাড়বে। এতে ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাবে। ফলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমার আশঙ্কা রয়েছে। সবচেয়ে বড় আঘাত আসতে পারে পোশাক রপ্তানিতে। বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক। সেই পোশাক রপ্তানির একক বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের ১৮ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপে দেশের তৈরি পোশাক নিয়েই ভাবনা বেশি। দাম বেড়ে যাওয়ার মার্কিন ক্রেতারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিতে পারেন যার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানিতে। শুধু তৈরি পোশাক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কারণে চামড়াপণ্য, হোমটেক্সটাইল, হিমায়িত মাছ ও চিংড়ি, পাটপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানিতেও ধাক্কা আসার শঙ্কা রয়েছে। গত অর্থবছর চামড়াপণ্য রপ্তানি করে ২১ কোটি, হোমটেক্সটাইলে প্রায় ৫ কোটি ডলার, হিমায়িত মাছ ও চিংড়ি রপ্তানি করে ১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার দেশে আসে।
বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এই শুল্ক যতটা কমিয়ে আনা যায় সে জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করছে সরকার। এ জন্য যদি আমদানি নীতি সংশোধন করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়িয়ে কিছুটা সুবিধা নেওয়া যায় সেই চেষ্টাও করা হবে বলে জানা গেছে।
Comments