শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৩১ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৩১ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বরিশালে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন, র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১১ টায় অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বরে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন, র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শহিদ জননী জাহানারা ইমামের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বরিশাল মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ বরিশাল জেলার নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে একটি র্যালি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালিশেষে ফকির বাড়ি রোড সংগঠন কার্যালয়ে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৩১ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হব।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুজন আহমেদ ও পরিচালনা করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বরিশাল মহানগর শাখার অর্থ সম্পাদক ফারজানা আক্তার। সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ বরিশাল জেলার সমন্বয়ক ডা মনীষা চক্রবর্তী, কড়াপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক শোনালি কর্মকর, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বরিশাল জেলার সভাপতি দুলাল মল্লিক, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম বরিশাল জেলার সভাপতি মাফিয়া বেগম প্রমুখ।
এসময়ে নেতৃবৃন্দ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৩১ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে জাহানারা ইমাম তার ছেলে রুমিকে বিদেশে পড়তে না পাঠিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন, পরিবারের উপর পাকবাহিনীর নির্যাতন সহ্য করেছেন। তার ছেলে রুমি মুক্তিযুদ্ধে ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীরোচিত যুদ্ধ করে, পরে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে সে শহীদ হয়। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি প্রথমবারের মত বাংলাদেশে উত্থাপন করেন। ১৯৭১ এ আলবদর, আলশামস, রাজাকার বাহিনী গঠন করা গনহত্যাকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামি তাদের আমির হিসেবে গোলাম আজমের নাম ঘোষণা করেন- তখনই সারা দেশ আন্দোলনে ফেটে পড়ে। ১৯৯২ সালে গঠন করা হয় ৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি,তৈরি হয় গণআদালত যার নেতৃত্বে ছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। রাষ্টীয় পৃষ্ঠপোষকতা রাজাকারদের পক্ষে থাকলেও দেশের সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল রাজাকারদের বিচার নিশ্চিত করা। এর পরে ১৯৯৪ সাথে ২৬ জুন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পরে যুদ্ধাপরাধী বিচার এবং একটি সাম্যের বাংলাদেশ নির্মাণের দায়িত্ব দিয়ে যান বাংলাদেশের জণগনের উপর। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাহানারা ইমামের সেই চেতনার উত্তরসূরি। জাহানারা ইমাম লড়াই করেছিলেন তাঁর সন্তানের মত লক্ষ সন্তানের হত্যার জন্য দায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে। একজন রুমীর জননী জাহানারা ইমামই স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণ আদালত গঠন করেছিলেন, পরিণত হয়েছিলেন "শহীদ জননী"তে। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত গণ-আদালত যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত হয়েছিল। ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই গণ-আদালত প্রতীকী বিচার করে, যেখানে গোলাম আযমকে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধী ঘোষণা করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে সদ্য বিদায়ী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার তার স্বৈরশাসনকে জায়েজ করেছিল, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র- বাস্তবায়নের জন্য কোনদিনও উদ্যোগ নেয়নি। চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, কিন্তু স্বাধীনতার চেতনা থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম আমাদের কাছে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা, তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী আমাদের কাছে শহীদ রুমীর স্বপ্নের ছাত্র-শ্রমিক-মেহনতী জনতার বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামের তাগিদ।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ৭১ এবং ২৪ এ বাংলাদেশে যারা সংগঠিত করছে অবিলম্বে তাদের বিচার করতে হবে। জাহানারা ইমামকে স্মরণ করতে হলে, তার চেতনা বাস্তবায়নে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হলে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।
আলোচনাসভা শেষে শহিদ জননী জাহানারা ইমামের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কুইজ প্রতিযোগিতা ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী করা হয়।
Comments