বরিশালে বিয়ে বাড়িতে হামলায় বর ও কনে পক্ষের নারীসহ আহত ২০

তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে বরিশালের মুলাদীতে বিয়ে বাড়িতে হামলা করেছে প্রতিবেশি পরিবারের লোকেরা। হামলায় বর এবং কণে পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ১১ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বরিশালের মুলাদী পৌর সভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তেরচর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। তাছাড়া মঙ্গলবার দুপুরেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের ওপর দ্বিতীয় দফায় হামলার অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হামলায় আহতরা হলেন- স্থানীয় দক্ষিণ গলইভাঙ্গা এলাকার জাকির হাওলাদারের স্ত্রী সোনিয়া বেগম (৩৫), মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৭), কাজির চরের মাইদুল বেপারীর স্ত্রী জাকিয়া বেগম (২৪), কামাল বয়াতীর ছেলে রকমত উল্লাহ (১৬), ঘোষের চরের বাসিন্দা আল আমিনের স্ত্রী লাইজু বেগম (৩৫), জালালাবাদ লক্ষ্মীপুরের আলতাফ সিকদারের স্ত্রী পারুল বেগম (৫০), ও সজীব ডাক্তারের স্ত্রী মৌসুমী বেগম (২৫), মুলাদী পৌর সভার তেরচর এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের মেয়ে স্ত্রী শারমিন আক্তার (৩০), ছেলে আরাফাত (১৭), শামীম সিকদারের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (২৮) এবং আলাবক্স সিকদারের ছেলে মাইনুদ্দিন (৩৫)।
এদিকে বিয়ে বাড়িতে অতর্কিত হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরের দিকে মুলাদী থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। মুলাদী পৌর সভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তেরচর এলাকার মৃত আলাবক্স সিকদারের ছেলে আলতাফ হোসেন সিকদার বাদী হয়ে ১০ জনের নামে এবং ৪০-৪৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে এজাহার দায়ের করেন।
অভিযুক্তরা হলেন- জিসান মল্লিক (২০), তানজিদ সিকদার (১৯), জিহাদ মল্লিক (২২), ফয়সাল মল্লিক (২৫), দুলাল মল্লিক (৫৫), জাকির মল্লিক (৫০), ইকবাল মল্লিক (২৮), ইমাম মল্লিক (৩৩), হাসান মল্লিক (৩৮) ও নাঈম মল্লিক (২৪)। অভিযুক্তরা সবাই মুলাদী পৌর সভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের তেরচর এলাকার বাসিন্দা।
মামলার বাদী আলতাফ হোসেন সিকদার জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তাদের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। এসময় কণেপক্ষ এবং বরের আত্মীয়স্বজন ওই বাড়িতে অবস্থান নিয়ে বিয়ের আনন্দ উপভোগ করছিল। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই পার্শ্ববর্তী মল্লিক বাড়ির লোকেরা লাঠিসোটা, রডসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে বিয়ে বাড়িতে। এসময় তারা নারী-পুরুষসহ অন্তত ২০ জনকে বেধরকভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন।
আহতরা জানিয়েছেন, বাদী আলতাফ হোসেন সিকদারের পাঁচ বছর বয়সি নাতি মো. ইয়ামিন পার্শ্ববর্তী দোকানে যায়। এসময় অজ্ঞাতনামা ভ্যান চালক তার গায়ে ভ্যানগাড়ি উঠিয়ে দেয়। এতে ইয়ামিন গুরুতর আহত হয়। খবর পেয়ে ইয়ামিনের বাবা শামীম ঘটনাস্থলে গিয়ে এ নিয়ে ভ্যান চালকের সাথে তর্কে জাড়ায়।
তখন স্থানীয় দোকানী আলমগীর মল্লিক ভ্যান চালকের পক্ষ নিয়ে শিশুটির বাবাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায় অভিযুক্ত ইকবাল মল্লিক ঘটনাস্থলে গিয়ে শামীম ও তার স্বজন রাহাতকে মারধর করে। ঘটনাটি সেখানেই মিমাংশ করে দেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
তাতে ক্ষ্যান্ত হয়নি দোকানি আলমগীর মল্লিকসহ তার পরিবারের লোকেরা। বরং ওই ঘটনার জের ধরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আলতাফ হোসেন সিকদারের বসত বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালে লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত হামলা করে। তারা আলতাফ সিকদারের পরিবারসহ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া অতিথিদের এলোপাথারীভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এসময় তারা বসতঘরে হামলা-ভাঙচুর করে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে এজাহারে।
মুলাদী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মমিন উদ্দিন বলেন, এই ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তাছাড়া ওই ঘটনার জেরে মঙ্গলবার দুপুরেও মুলাদী হাসপাতালে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি। তখন হাসপাতালে পুলিশও পাঠানো হয়েছে। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন তিনি।
Comments