শ্রমজীবী মানুষের ঈদ—মোংলা বন্দরে ৩১৫০ জনের চোখে আনন্দের আলো

চোখে ক্লান্তির রেখা, কাঁধে বছরের পর বছর ভার টানা শ্রম। মোংলা বন্দরের যে শ্রমিকদের ঘাম ঝরে এই দেশের আমদানি-রপ্তানির চাকা ঘোরে, তাদের বেশিরভাগের ঘরেই নেই ঈদের আগে কেনাকাটার উৎসব। তবুও এবারের কোরবানির ঈদে সেই মুখগুলোতে দেখা গেল স্বস্তির এক চিলতে হাসি। কারণ তারা ফিরে পেয়েছেন পাশে থাকার আশ্বাস, পেয়েছেন সামান্য কিছু খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট—যেটুকুতে ফুটে উঠেছে ভালোবাসার ছোঁয়া।
শনিবার সকালে মোংলা পৌর শহরের মাদ্রাসা রোডে ষ্টিভিডরস কোম্পানি মেসার্স গফুর ব্রাদার্সের চত্বরে এক মানবিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে ৩১৫০ জন শ্রমিক-কর্মচারীর হাতে তুলে দেওয়া হয় ঈদ উপহার। সেই উপহারে ছিল চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণ, সেমাই, দুধ আর একটি করে সাবান। হোক তা ছোট—তবু এ যেন পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য যথেষ্ট।
উদ্বোধন করেন মোংলা বন্দর বার্থ ও শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং মেসার্স হাশেম অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. জুলফিকার আলী।
এই উদ্যোগে অংশ নেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, শিপিং এজেন্ট ও বার্থ-শিপ অপারেটররা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মাহবুবুর রহমান মানিক, মেসার্স মাহবুব ব্রাদার্স এন্ড কোং-এর মালিক মাহবুবুর রহমান টুটুল, মেসার্স মক্কা-মদিনার মালিক গোফরান হোসেন এবং মেসার্স টি. হক এন্ড কোম্পানির মালিক আলমগীর হোসেন।
একজন বৃদ্ধ শ্রমিকের মুখে শোনা গেল একটিই কথা, "ঈদে কী আনবো ছেলেমেয়েদের জন্য ভাবছিলাম। এখন অন্তত একদিন ভালো খেতে পারবো।"
এই আয়োজন শুধু খাদ্য বিতরণ নয়—এ এক নিঃশব্দ সম্মান জানানো, যারা বছরের পর বছর বন্দরের ইস্পাত আর পাথরের ভেতরে দাঁড়িয়ে রেখে গেছেন নিজের জীবন। ঈদের আনন্দ হয়তো তারা বাজারে গিয়ে কিনে আনতে পারেন না, কিন্তু আজ তারা পেয়েছেন সম্মানিত হওয়ার উপলক্ষ।
ঈদ আসে খুশি নিয়ে, কিন্তু সেই খুশি সবার ঘরে পৌঁছায় না। মোংলায় সেই খুশি পৌঁছে দিতে যারা এগিয়ে এসেছেন, তাদের প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা—কারণ কিছু হাসি শুধু উপহার নয়, আত্মারও ঋণ হয়ে থাকে।
Comments