সিডনির বন্ডি বিচে ইহুদি উৎসবে গুলিবর্ষণকারীরা পাকিস্তানী বাবা ও ছেলে
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডি বিচে একটি ইহুদি ধর্মীয় উৎসবে অন্তত ১৫ জনকে হত্যার ঘটনায় দুই বন্দুকধারী ছিলেন বাবা ও ছেলে। তারা পাকিস্তানি বংশদ্ভুত। সোমবার এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ। কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন থাকা সত্ত্বেও, এটি প্রায় তিন দশকের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে প্রাণঘাতি বন্দুক হামলা।
নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের কমিশনার মাল ল্যানিয়নের বরাতে জানা গেছে, ৫০ বছর বয়সী সাজিদ আকরাম পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার ২৪ বছর বয়সী ছেলে নাভিদ আকরাম গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, এই দুই হামলাকারী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সাজিদ আকরামের নিউ সাউথ ওয়েলস ড্রাইভিং লাইসেন্সের একটি ছবিতে তাকে সবুজ রঙের একটি শার্ট পরা অবস্থায় দেখা গেছে, যা পাকিস্তান ক্রিকেট দলের জার্সির মতো দেখতে।
অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক জানান, নাভিদ আকরাম অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণকারী নাগরিক। তার বাবা সাজিদ আকরাম ১৯৯৮ সালে শিক্ষার্থী ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। ২০০১ সালে তার ভিসা পার্টনার ভিসায় রূপান্তরিত হয় এবং পরবর্তীতে তিনি রেসিডেন্ট রিটার্ন ভিসা পান।
গ্রীষ্মের শেষ দিনে সহিংসতাটি ঘটে, যখন হাজারো মানুষ অস্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে পরিচিত বন্ডি বিচে জড়ো হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকশ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন 'চানুকাহ বাই দ্য সি' অনুষ্ঠানে, যা আট দিনের হানুক্কা উৎসবের সূচনা উপলক্ষে আয়োজন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাটি প্রায় ১০ মিনিট স্থায়ী হয়। এতে সৈকত ও আশপাশের রাস্তায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, মানুষ দিগ্বিদিক ছুটে পালাতে থাকে। পুলিশ জানায়, লক্ষ্যবস্তু ওই হানুক্কা অনুষ্ঠানে প্রায় এক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সৈকতের পাশের একটি ছোট পার্কে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল।
কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটের দিকে গুলির খবর পেয়ে জরুরি সেবা সংস্থাগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, সাঁতারের পোশাক পরা মানুষজন গুলির শব্দ শুনে পানি থেকে দৌড়ে পালাচ্ছেন। অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়,কালো শার্ট পরা দুই ব্যক্তি সৈকতে যাওয়ার একটি ফুটব্রিজ থেকে লম্বা বন্দুক দিয়ে গুলি চালাচ্ছেন।
পুলিশ এখনো হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের ধরন নিশ্চিত করেনি। তবে ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হামলাকারীরা সম্ভবত একটি বোল্ট-অ্যাকশন রাইফেল ও একটি শটগান ব্যবহার করছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার টেলিভিশনে প্রচারিত একটি নাটকীয় ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি একজন বন্দুকধারীকে ঝাঁপিয়ে ধরে নিরস্ত্র করেন। পরে তিনি বন্দুকটি মাটিতে রেখে দেন। নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স ওই ব্যক্তিকে 'একজন প্রকৃত নায়ক' বলে অভিহিত করেন। অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যমে তাকে ফলের দোকানের মালিক আহমেদ আল আহমেদ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
Comments