শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্যর প্রতিবাদে রাঙামাটিতে চলছে ৩৬ঘন্টার হরতাল
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে শিক্ষক নিয়োগে কোটা নয়, মেধাকে প্রাধান্য দেয়ার দাবিতে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল চলছে। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত হরতাল চলবে।
হরতালের সমর্থনে রাঙামাটি শহরের বনরূপা, তবলছড়ি, দোয়েল চত্বরসহ ৮-১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এতে স্কুল-কলেজ ও অফিসগামী সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। সাপ্তাহিক ছুটিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাঙামাটিতে পর্যটকদের ভিড় থাকে, চলমান হরতালে শহরে অবস্থানরত পর্যটকরাও বিপাকে পড়েছেন।
হরতালের অংশ হিসেবে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভ চলছে। এতে রাঙামাটির সঙ্গে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি শহরের একমাত্র সিএনজি সার্ভিসসহ শপিংমলগুলোও কার্যত বন্ধ রয়েছে।
এর আগে বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন কোটাবিরোধী ঐক্যজোটের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী ইব্রাহিম রুবেল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতা রাকিব হাসান, শিক্ষার্থী নুরুল আলম, রুবেল হোসেন, রেজাউল করিম রাজু ও ইমাম হোসাইন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কোটা বৈষম্য এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ জারিকৃত কোটা সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা না মেনে জেলা পরিষদের নিজস্ব আইনে ২১ নভেম্বর পরিক্ষার তারিখ ঘোষণা করেন। যা প্রচলিত আইন ও নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের পত্র উত্থাপন করে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৭ শতাংশ কোটা রেখে বাকি ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানালে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে বলেন, কোনো মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন নয় জেলা পরিষদের নিজস্ব আইন দিয়েই পরিষদ পরিচালিত হবে বলে জানান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার।
সংগঠনটির নেতারা অভিযোগ করে বলেন, দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের পরও পার্বত্য জেলার হস্তান্তরিত বিভাগে এখনো ৭০ শতাংশ উপজাতি কোটা বহাল রয়েছে যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। একই সঙ্গে নিয়োগে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ–বাণিজ্যের অভিযোগও তোলেন তারা। প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদ ও কোটা বরাদ্দ স্পষ্ট না করাকেও তারা নিয়মবহির্ভূত বলে উল্লেখ করেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কোটা পদ্ধতি সংশোধনে বলা হয়েছে, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়িত্তশাসিত, আধাস্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকুরীতে/ কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ভিত্তিক ৯৩%, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫%, এবং শারীরীক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১% কোটার কথা বলা আছে। নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদ সমূহ সাধারণ মেধা তালিকা সাধারণ মেধা তালিকা হতে পূরণ করা হবে।
হরতাল চলাকালীন ২০ ও ২১ নভেম্বর জেলার সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে জরুরী সেবায় নিয়োজিত যানবাহন হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। উল্লেখ্য, আগামী ২১ নভেম্বর শুক্রবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
Comments