কিশোরগঞ্জে ৩ সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন বিধবা মনজিলার

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে সহায়সম্বলহীন ও স্বামী হারা বিধবা নারী মনজিলার পরিবারে যেন জেঁকে বসেছে চরম দারিদ্র্য। এমন দারিদ্র্য খাদ্য,বস্ত্র ও বাসস্থানের অভাবে তিনি ৩ সন্তান নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এ দিশাহারা জীবনে মনজিলা বেওয়া সন্তানাদি নিয়ে একদিকে জোড়াতালির জরাজীর্ণ ও ভাঙাচোরা টিনের ছাপড়া ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করছেন মানবেতর বাস।
অন্যদিকে বাঁচার আকুতিতে লাজলজ্জা ফেলে কাঁধে তুলে নিয়েছেন ভিক্ষার ঝুলি। ভিক্ষার পাশাপাশি খোঁজনা ভাত ও ঝিয়ের কাজের যৎসামান্য আয়ে ২ ছেলে ও ১ মেয়ের পেটের অন্ন জোটান তিনি। এতে এক বেলা খেতে পারলেও না খেয়ে থাকেন তারা দুই বেলা। পরিধানের পোশাক-পরিচ্ছদও চলে অন্যের দানদক্ষিণায়। অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া। এক ছেলে বিয়েশাদি করে ঢাকায় সংসার পাতলেও নেয় না মায়ের কোনো খোঁজখবর।
তার এ অসহায়ত্বের মাঝে এমন নিদারুণ দুঃখ-কষ্ট ও মর্মস্পর্শী জীবনযুদ্ধ যেন রসুলপুরের আসমানিদের জীবন গল্পকেও হার মানায়। উন্নত সভ্যতার এ যুগেও এমন দুস্থ ও অসহায় গ্রামীণ আসমানিদের যেন দেখার কেউ নেই! এ আসমানি (মনজিলার) বাস উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের উত্তর সিঙ্গেরগাড়ি পাঠানপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের প্রয়াত রহিম উদ্দিনের স্ত্রী। রহিম উদ্দিন গত ১২ বছর আগে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৪ সন্তানাদি রেখে মারা যান।
সরেজমিনে দেখা গেছে,বিধবা মনজিলার প্রয়াত দিনমজুর স্বামীর এক চিলতে ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। এ ভিটেমাটির উপর তার একমাত্র মাথাগোঁজার ঠাঁই টিনের চালার ছাপড়া ঘরটি ভগ্নদশায় বেহাল হয়ে পড়েছে। এবড়ো-খেবড়ো ও ঠেস দেওয়া বাঁশের খুঁটির উপর দাঁড় করানো অসংখ্য টুকরো টুকরো পুরনো টিনের জোড়াতালির জরাজীর্ণ একটি ছাপড়া টিনের চালা ঘর। চালে যেনতেনভাবে পাতানো মরিচা ধরা পুরনো টুকরো টুকরো টিন। এসব জরাজীর্ণ টিনের অগণিত ছিদ্র ও ফাটল দিয়ে রোদণ্ডবৃষ্টি ও আকাশের তারার আলো ঠিকরে পড়ে। চালার বেড়ার চারদিক একইভাবে যুক্ত করা হয়েছে জরাজীর্ণ টিন, পলিথিন, পুরনো প্লাস্টিক-চটের বস্তা, পুরনো মশারি ও জামাকাপড়।
এমন হালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বছরের পর বছর দিনাতিপাত করে চলছেন মনজিলা বেওয়া। দিন গড়িয়ে রাত হলে সন্তানাদি নিয়ে আসমান ভেঙে মাথায় পড়ে তার। সামান্য বাতাসে উড়ে যায় টিনের চালা। বর্ষাকালে আকাশে মেঘ দেখলে ঘোড়দৌড় দিতে হয় অন্যের ঘরের বারান্দায়। ভাঙা চালার টিনের ছিদ্র দিয়ে অনায়াসে পানি ঢুকে বিছানাপত্র ভিজে একাকার হয়ে যায়। শীতকালে কনকনে বাতাস আর কুয়াশায় সৃষ্টি হয় একই অবস্থা।
মনজিলা বেওয়া বলেন,এমনিতে স্বামী হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন। তিনি ছোট্ট ছোট্ট ৪ সন্তানকে রেখে ১২ বছর আগে মারা যান। এ থেকে সন্তানদের নিয়ে নিদারুণ অভাব-অনটনের মাঝে অথৈই সাগরে ভাসছি। কখনো ভিক্ষা করে,মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে,কখনো হাত পেতে, কখনো বা খোঁজনা ভাতে তাদের মুখের আহার জোটে। এক বেলা খেলে অন্য বেলা উপোষ থাকতে হয়। অন্যের দয়ায় চলে শরীরের পোশাকাদি। আমার হতভাগা পোড়া কপালের কষ্টের কথা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। এত সদস্যের পেটের ভাত জোটে না সেখানে ঘর নির্মাণ করা দুঃস্বপ্ন। কোনো দয়ালু ও হৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমাদের দুর্দশা লাঘবে এগিয়ে আসতেন ও মুখপানে তাকাত তা হলে সন্তানাদি নিয়ে হাজারো কষ্টের মাঝে রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম এবং সারা জীবন নামাজ পড়ে তাদের জন্য দোয়া করতাম।
এ ব্যাপারে মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান মিঠুর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন,ওই অসহায় পরিবারটিকে ঘরের জন্য ইউএনওর কাছে আবেদন করতে বলেছি।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা ও সমাজ সেবা কর্মকর্তা জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে উভয় কর্মকর্তা ঘরের আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,সরকারি বরাদ্দ এলে সরেজমিন যাচাই-বাছাই করে অসহায় পরিবারটিকে সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।
Comments