দুগ্ধজাত খাবারে বাড়ছে ক্যানসারের ঝুঁকি

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও নানা পুষ্টিগুণের কারণে অনেকেই মনে করেন, এগুলো সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন অতিরিক্ত পরিমাণে দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।
হিন্দুস্তান টাইমস থেকে জানা যায়, সম্প্রতি দুবাইভিত্তিক ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ও অনকোলজিস্ট ডা. শারমিন ইয়াকিন তার এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, দুগ্ধজাত খাবার প্রদাহ সৃষ্টিকারী, আর শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহই ক্যান্সারের অন্যতম মূল কারণ।
যেভাবে দুগ্ধজাত খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়
ডা. ইয়াকিনের মতে, গরু, মহিষ বা ছাগলের দুধ থেকে তৈরি সব ধরনের খাবার যেমন দুধ, দই, পনির, চিজ, মাখন বা ক্রিম দেহে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই প্রদাহ শুধু নির্দিষ্ট রোগীর জন্যই নয়, বরং সুস্থ ব্যক্তিদের শরীরেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, দুগ্ধজাত খাবার দেহের প্রদাহ বাড়ায়। প্রদাহ থেকেই শরীরে কোষ বিভাজনের অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে, যা সময়ের সঙ্গে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই শরীরে কোনো অসুস্থতা না থাকলেও অতিরিক্ত দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যানসার ও কোলোরেক্টাল ক্যানসারের সঙ্গে অতিরিক্ত দুগ্ধজাত খাবারের সম্পর্ক রয়েছে। ডা. ইয়াকিন বলেন, যারা নিয়মিত দুধ, চিজ, পনির বা দই খান, তাদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। দুধের প্রোটিন ও হরমোন জাতীয় উপাদান শরীরের হরমোন ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে, যা ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে পারে।
নিরাপদ বিকল্প: চিকিৎসক পরামর্শ দিচ্ছেন, দুগ্ধজাত খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রেখে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (প্রদাহরোধী) বিকল্প বেছে নেয়া যেতে পারে। যেমন—
> বাদাম দুধ, সয়াদুধ বা ওট দুধ;
> সবুজ শাকসবজি, ডাল, ফলমূল ও ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার;
> নিয়মিত পানি পান ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার;
> এগুলো শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
দুগ্ধজাত খাবার শরীরের জন্য উপকারী হলেও, অতিরিক্ত গ্রহণের ফল হতে পারে বিপরীত। পরিমিতি ও সচেতন খাদ্যাভ্যাসই হলো মূল চাবিকাঠি। তিনি বলেন, খাবার কখনোই পুরোপুরি ক্ষতিকর হয় না, কিন্তু ভুল পরিমাণে তা ভয়াবহ হয়ে ওঠে। সে কারণেই খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে ভারসাম্য দরকার।
Comments