গ্রীনসিটি রাজশাহীতে আড়ম্বরপূর্ণ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মহাঅষ্টমী পূজা অনুষ্ঠিত

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার অষ্টমী আজ। দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা। অষ্টমী তিথিতে দিনে হয় অষ্টমী পূজা, রাতে সন্ধি পূজা। অষ্টমীর শেষ নবমীর শুরু– এই সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হয় বলে এ পূজার নাম সন্ধি পূজা। যেসব মণ্ডপে কুমারী পূজা হয়, সেখানে একই দিনে অনুষ্ঠিত হয় তিনটি পূজা।
দিনের বেলা অষ্টমী বিহিত পূজা ও কুমারী পূজা, রাতে সন্ধি পূজা। কুমারী বালিকার মধ্যে বিশুদ্ধ নারীর রূপ কল্পনা করে তাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করেন ভক্তরা। রাজশাহীর রামকৃষ্ণ আশ্রম মন্দিরে প্রতিবছরই আড়ম্বরপূর্ণ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মহাঅষ্টমী পূজা উদযাপন করেন হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
রামকৃষ্ণ আশ্রম মন্দিরের পুরোহিত বলেন, এ বছর কুমারী পূজা শুরু হচ্ছে বেলা ১১টায় এবং শেষ হবে দুপুর ১টায়। এর আগে মহাষ্টমী পূজা আরম্ভ হয় সকাল ৬টা ১০ মিনিটে, পুষ্পাঞ্জলি হয় সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে এবং মধ্যাহ্ন প্রসাদ দুপুর ১২টায়। মহাঅষ্টমী উপলক্ষে সন্ধিপূজা হবে সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে এবং সমাপন হবে সন্ধ্যা ৭টা ১ মিনিটে।
হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত এক থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা ব্রাহ্মণ বা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কুমারী নারীকে দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। শ্রী রাম কৃষ্ণের কথামতে, কুমারী পূজার বিষয়ে বলা হয়েছে- শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর রূপ বেশি প্রকাশ পায় এবং মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার উদ্দেশ্য।
কুমারী পূজা সম্পর্কে রাজশাহী রামকৃষ্ণ আশ্রম মন্দিরের সভাপতি ড.হরি প্রসাদ সিংহ বলেন, কুমারী পূজা হলো নারীকে মাতৃশক্তির প্রতীক হিসেবে শ্রদ্ধা করা। এজন্য প্রতি বছর রামকৃষ্ণ মিশন ঢাকা, মহাঅষ্টমীর দিন কুমারী পূজা আয়োজন করে। তাছাড়া আমাদের শাস্ত্রে বলা আছে, প্রতিটি নারীর মধ্যেই দেবীশক্তি বিদ্যমান। এই পূজার মাধ্যমে সেই শক্তিকে আমরা সম্মান জানাই।
কুমারী পূজা উদযাপনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, 'অতিথিদের জন্য যথাযথ নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখানে পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যরা সবসময় দায়িত্ব পালন করছেন। সার্বিকভাবে এবারের পূজা শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হবে বলে মনে করি।
শাস্ত্রমতে কুমারী পূজার উদ্ভব হয় বানাসুর বা কোলাসুরকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে। উল্লেখ্য, কোলাসুর নামক অসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করে নেয়। কোলাসুর স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হোন। সে সকল দেবগণের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী দেবতাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী মানবকন্যারূপে জন্মগ্রহণ করে কুমারী অবস্থায় কোলাসুরকে হত্যা করেন। পুনর্জন্মে কুমারীরূপে কোলাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়। প্রতি বছর দুর্গাদেবীর মহাঅষ্টমী পূজাশেষে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
পুরোহিতদর্পণ প্রভৃতি ধর্মীয় গ্রন্থে কুমারী পূজার পদ্ধতি এবং মাহাত্ম্য বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনানুসারে কুমারী পূজায় কোনও জাতি, ধর্ম বা বর্ণভেদ নেই। দেবীজ্ঞানে যেকোনো কুমারীই পূজনীয়। তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কুমারী কন্যার পূজাই সর্বত্র প্রচলিত। এ ক্ষেত্রে এক থেকে ১৬ বছর বয়সী যেকোনো কুমারী মেয়ের পূজা করা যায়। অনেকের মতে ২ বছর থেকে ১০ বছরের মেয়েদের পূজা করা যায়।
বয়সের ক্রমানুসারে পূজাকালে কুমারীদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন এক বছরের কন্যাকে বলা হয় 'সন্ধ্যা', দুই বছরের কন্যাকে বলা হয় 'সরস্বতী', তিন বছরের কন্যাকে বলা হয় 'ত্রিধামূর্তি', চার বছরের কন্যাকে বলা হয় 'কালীকা', পাঁচ বছরের কন্যাকে বলা হয় 'সুভগা', ছয় বছরের কন্যাকে বলা হয় 'উমা।
শ্রীরামকৃষ্ণের মতে- সব স্ত্রীলোক ভগবতীর এক একটি রূপ। শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। দুর্গাপূজার অষ্টমী বা নবমীতে সাধারণ ৫ থেকে ৭ বছরের একটি কুমারীকে প্রতিমার পাশে বসিয়ে পূজা করা হয়।
Comments