অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর, জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে হতাশা

নানা সংকট ও চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এক বছর পার করল অন্তর্বর্তী সরকার। এই সময়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র এসেছে, আবার নির্বাচনী রোডম্যাপও ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে যে সত্যিকার গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের পথে হাঁটতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ, গত এক বছরে সে পথে কতটা এগিয়েছে সরকার? বিশ্লেষকরা বলছেন, জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে খুব বেশি দৃঢ়তা ও বিচক্ষণতা দেখাতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার।
রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়নের ভয় উপেক্ষা করে যে প্রত্যাশায় লাখো ছাত্র-জনতার ঠিকানা রাজপথ হয়েছিল, তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্য বিলোপ। পরে তা রূপ নেয় স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে।
এক নাজুক মুহূর্তে নানামুখী চ্যালেঞ্জের ভারকে সঙ্গী করে অন্তর্বর্তী সরকার যখন যাত্রা শুরু করে, তখন জনগণের প্রত্যাশার পারদ তুঙ্গে ছিল। পরে দেখা যায় ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারের নানামুখী ষড়যন্ত্র, মব সহিংসতা ও বিভিন্ন দাবি-দাওয়ায় একরকম খাবি খেতে হয়েছে এ সরকারকে। যদিও অর্থনীতির সুবাতাস কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে।
সার্বিক বিচারে গত ১ বছরে সেই প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির বাস্তব সংযোগ কতটা হয়েছে? প্রশ্ন ছিল শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, কিছু ব্যাপারে বেশ ভালো সাফল্য দেখি আমরা, যেটি প্রয়োজনীয় সাফল্য। যেমন- অর্থনীতে, যেটি মূল জায়গা। তবে সমাজে যে বৈষম্য রয়েছে, তা অন্তত কমানো, দূর করা তো সহজে যাবে না। সে দায়িত্বও এ সরকার পালন করতে পারবে না।
এ শিক্ষাবিদ আরও বলেন, অর্ন্তবর্তী সরকার যে সংস্কারমূলক কাজগুলো নিয়েছে, সেসব সংস্কার যে তারা করে যেতে পারবে সেটাও সম্ভব না। পরবর্তী সরকারকেই করতে হবে তা।
এদিকে জুলাই অভ্যুত্থান জাতির মনে যে পরিবর্তনের আশা জাগিয়েছে, তা অনেকটাই বিবর্ণ হতে শুরু করেছে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আজফার হোসেন। তার মতে রাষ্ট্র ও সমাজের কাঙ্ক্ষিত রূপান্তর ঘটাতে পারছে না বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ।
এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, কৃষক-শ্রমিকদের অবস্থার তো কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাদের নিয়ে বড় ধরনের কোনো কাজ হয়নি। কমিশনের কথা বলবেন, শিক্ষা কমিশনই নেই। জান এবং মালের মধ্যে, বিশেষ করে জানের নিরাপত্তা দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এই সরকারকে কীভাবে সফল বলবেন?
জন-আকাঙ্ক্ষা ছিল দেড় দশকে ধ্বংস হওয়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত সংস্কার হবে। তা সময়সাপেক্ষ বলে মানছেন এই শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তবে নিয়মিত নির্বাচন ও স্বাধীন গণমাধ্যম ছাড়া সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এখানে পুরোনো লোকরাও রয়েছেন। তাই দ্রুতই যে পরিবর্তন হবে, তা নয়। তবে তাদের আগের যে কাজ, সেসব থেমেছে। যে সরকার নির্বাচিত হয়ে আসবে, তাদের দায়িত্ব হবে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার চেষ্টা করা।
বর্তমান অন্তর্বর্তী হোক কিংবা আগামীর নির্বাচিত সরকার, জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদদের ত্যাগ, তাদের পরিবারের বেদনা আর আহতদের যন্ত্রণা পাশ কাটিয়ে কোনো সরকারের পক্ষেই জন-আকাঙ্খার বাস্তবায়ন সম্ভব কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।
Comments