সাগরিকার হ্যাটট্রিকে নেপালকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

ম্যাচটা ছিল অলিখিত ফাইনাল, বাংলাদেশের দরকার ছিল স্রেফ ড্র; আর পা হড়কালেই শিরোপা খোয়াতে হতো তাদের। তবে অপ্রতিরোধ্য এই বাংলাদেশকে ঠেকানোর সাধ্য আছে কার? সোমবার (২১ জুলাই) বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় নেপালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা উল্লাস করে বাংলাদেশের মেয়েরা।
এর আগে নেপালের বিপক্ষেই লাল কার্ড পেয়ে নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিলেন মোসাম্মত সাগরিকা। তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সেই নেপালের বিপক্ষেই মাঠে ফিরলেন সাগরিকা। আবারও ছড়ালেন হ্যাটট্রিকের আলো। দাপুটে জয়ে সাফ উইমেন'স অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা বাংলাদেশ ধরে রাখল অপরাজিত থেকে।
বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় সোমবার রাউন্ড রবিন লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচে নেপালকে ৪-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। ম্যাচের সবগুলো গোলই করেছেন সাগরিকা। চার দল নিয়ে হওয়া এবারের প্রতিযোগিতায় টানা ছয় ম্যাচ জিতে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে সেরা হল বাংলাদেশ, আর রানার্সআপ হয়েছে নেপাল।
গত বছর ভারতের সঙ্গে যৌথ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচটা ছিল নানা নাটকীয়তায় ভরা। নির্ধারিত সময় শেষে টসের মাধ্যমে শিরোপা নির্ধারণ, তবে সেই টস যে শিরোপা নির্ধারণের জন্য, তা জানতেনই না বাংলাদেশ অধিনায়ক। সে নিয়েই শুরু হয় নানা নাটক, অবশেষে দুই দলকেই যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।
এ বছর সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। আর তাদের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানায় নেপাল। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে পয়েন্ট টেবিলে সবার উপরে থাকা দলটাই হবে চ্যাম্পিয়ন। সবশেষ ম্যাচ শুরুর আগে বাংলাদেশের পয়েন্ট ছিল ১৫ আর নেপালের ১২। অর্থাৎ, এ ম্যাচে স্রেফ ড্র করলেই শিরোপা জিতবে বাংলাদেশ। আর নূন্যতম ব্যবধানেও যদি নেপাল ম্যাচটি জিতে যেতো, তাহলে তারাই জিততো শিরোপা।
এদিকে সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোকস্তব্ধ পুরো দেশ। এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন অনেকেই। আর আহতদের অনেকেই আছেন আশঙ্কাজনক অবস্থায়। আর এ কারণেই ম্যাচ শুরুর আগে কিংস অ্যারেনায় দু-দলের খেলোয়াড়রাই নিরবতা পালন করেছেন।
এ ম্যাচে নেপালকে কোনো পাত্তাই দেয়নি বাংলাদেশ। এর আগে নেপালের বিপক্ষেই লাল কার্ড দেখে তিন ম্যাচের জন্য নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিলেন মোসাম্মত সাগরিকা। আর আজ তাদেরই বিপক্ষে মাঠে ফিরেই গোলের দেখা পেলেন এই ফরোয়ার্ড।
ম্যাচের ৮ মিনিটেই গোল করে দলকে এগিয়ে নেন সাগরিকা। মিডফিল্ড থেকে এক ডিফেন্স চেরা থ্রু বল পান তিনি। নেপালের ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এগিয়ে যান তিনি। প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক বক্সের বাইরে এসেও আটকাতে পারেননি সাগরিকাকে। কোনাকুনি প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান এই ফরোয়ার্ড।
এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন সাগরিকা। পরের ম্যাচে নেপালের বিপক্ষেও গোলের দেখা পেয়েছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে নেপালের ডিফেন্ডার সিমরানের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন। এতে তিনি তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ ছিলেন। আজ নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরেই গোল করলেন।
ম্যাচের ১৫ মিনিটে বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিলি আক্তার পোস্টের সামনে বেরিয়ে এসে বল গ্রিপে নিতে পারেননি। নেপালের ফরোয়ার্ডের শট সাইড বারে লেগে ফেরত আসে। ফিরতি বলও জালে পাঠাতে পারেননি নেপালের খেলোয়াড়।
বাংলাদেশও ব্যবধান দ্বিগুণের সুযোগ পেয়েছিল। ১৯ মিনিটে মুনকি আক্তার বক্সের উপর থেকে গোলের উদ্দেশ্যে শট নেন। তবে ফাঁকা পোস্টে গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করেন নেপালের ডিফেন্ডার আনিশা রায়। প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলে ১-০ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ার্ধে নেপালকে আরও চেপে ধরে বাংলাদেশের মেয়েরা। ৫২তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন সাগরিকা। সতীর্থের পাস প্রথম স্পর্শে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে দারুণ শটে জাল খুঁজে নেন এই ফরোয়ার্ড।
এই গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই হ্যাটটিক পূরণ করেন সাগরিকা। মাঝমাঠ থেকে আসা লং ক্রস চিপ শটে গোলকিপারের মাথার উপর দিয়ে জালে জড়ান এই ফরোয়ার্ড।
৭৬তম মিনিটে বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে বল জালে জড়ান সাগরিকা। তার একটু পরই তাকে তুলে নেন বাংলাদেশ কোচ পিটার জেমস বাটলার। এরপর বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে ৪-০ গোলের বড় জয়ে শিরোপা ধরে রাখার আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
Comments