রুপার্ট মারডক ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ট্রাম্প

মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডক ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে অন্তত এক হাজার কোটি ডলারের মানহানির মামলা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ট্রাম্পের সঙ্গে কুখ্যাত নারী নিপীড়নকারী মার্কিন ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের বন্ধুত্ব নিয়ে বিস্ফোরক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মায়ামির ফেডারেল আদালতে গতকাল শুক্রবার মানহানির মামলাটি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ মামলার মধ্য দিয়ে ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প এমন এক কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিলেন, যা তাঁর রাজনৈতিক ভাবমূর্তির গুরুতর ক্ষতি করতে পারে।
গতকাল রাতে ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লেখেন, 'আমরা এইমাত্র সেই সব লোকজনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, যারা মিথ্যা, বিদ্বেষপূর্ণ, মানহানিকর, ভুয়া খবরভিত্তিক "প্রবন্ধ" প্রকাশে জড়িত, যেটা ছাপা হয়েছে এক নিম্নমানের পত্রিকায়, যার নাম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।'
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল গত বৃহস্পতিবার ছাপা হওয়া তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০০৩ সালে তখনকার আবাসন ব্যবসায়ী ট্রাম্প কুখ্যাত জেফরি এপস্টেইনকে তাঁর জন্মদিনে একটি আপত্তিকর চিঠি পাঠিয়েছিলেন। চিঠিতে একজন নগ্ন নারীর অবয়ব আঁকা ছিল। চিঠিতে তাঁদের দুজনের মধ্যে একটি 'গোপন বিষয়' থাকার উল্লেখও করা হয়।
এ মামলার অভিযোগপত্রে দুজন সাংবাদিক ও রুপার্ট মারডকের প্রতিষ্ঠান নিউজ করপোরেশনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, ওই ধরনের কোনো চিঠির অস্তিত্বই নেই এবং দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাম্পের সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে, এরই মধ্যে শত শত কোটি মানুষ তা দেখেছেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, 'বিবাদীদের ওই প্রতিবেদন প্রকাশের সময়কাল বিবেচনায় নিলে এর পেছনে তাদের বিদ্বেষপূর্ণ উদ্দেশ্য সহজেই বোঝা যায়। এতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আর্থিক ও সুনামের যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, তা ক্রমে আরও বাড়বে।'
এপস্টেইনের কর্মকাণ্ড ও ২০১৯ সালে তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগে নিজ সমর্থকদের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা হ্রাসে ট্রাম্প আরেকটি পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি তাঁর অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে কুখ্যাত ওই ধনকুবেরের বিরুদ্ধে গ্র্যান্ড জুরির সাক্ষ্য প্রকাশের আবেদন জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
নিউইয়র্কে দাখিল করা এক আবেদনে পাম বন্ডি উল্লেখ করেছেন, সাধারণত গোপন রাখা হয়ে থাকে, এমন সাক্ষ্য প্রকাশের এ অস্বাভাবিক অনুরোধের পেছনে রয়েছে 'জনগণের ব্যাপক আগ্রহ'।
ট্রাম্পসহ দেশ-বিদেশে বহু ধনকুবের ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বন্ধু ছিলেন জেফরি এপস্টেইন। তাঁর বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় নিজ বাড়িতে অনেক কন্যাশিশু ও কিশোরীদের যৌন নিপীড়ন ও পাচারের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। তিনি বিচার শুরুর অপেক্ষায় ছিলেন।
বিচারের অপেক্ষায় থাকাবস্থায় ২০১৯ সালে নিউইয়র্কের একটি কারাকক্ষ থেকে এপস্টেইনের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি আত্মহত্যা করেছেন, নাকি খুন হয়েছেন, তা নিয়ে সে সময় ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল।
এপস্টেইনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা ট্রাম্পের কট্টর ডানপন্থী সমর্থকদের মধ্যে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব উসকে দিয়েছিল, বিশেষ করে কথিত একটি আন্তর্জাতিক ধনাঢ্য শিশু যৌন নিপীড়ক চক্রকে ঘিরে। বিচার শুরু হওয়ার আগেই এপস্টেইনের অস্বাভাবিক মৃত্যু ওই ষড়যন্ত্রমূলক ধারণাকে আরও উসকে দেয়। পরে ঘোষণা করা হয়, এপস্টেইন আত্মহত্যা করেছেন।
গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর, তাঁর সমর্থকেরা জোরালোভাবে জেফরি এপস্টেইনের কথিত মক্কেলদের তালিকা প্রকাশের দাবি তোলেন। তবে চলতি জুলাই মাসের শুরুতে পাম বন্ডি এক সরকারি স্মারকে ঘোষণা করেন, এমন কোনো তালিকার আদৌ অস্তিত্ব নেই।
এ নিয়ে ট্রাম্পের 'মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন' ঘরানার সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বয়ানের ওপর ট্রাম্পের যে নিয়ন্ত্রণ, তা এক ব্যতিক্রমী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
গ্র্যান্ড জুরির সাক্ষ্য প্রকাশের অনুমতি আদালত দেবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে যদি তা প্রকাশ করাও হয়, ষড়যন্ত্রতত্ত্বে উত্থাপিত মূল প্রশ্নগুলো, বিশেষ করে এপস্টেইনের কথিত মক্কেলদের তালিকার অস্তিত্ব ও এ–সংক্রান্ত বিষয়বস্তুর ওপর আদৌ কোনো আলোকপাত করা হবে কি না, নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
গতকাল সাংবাদিকেরা ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত আরও বিস্তৃত তথ্য প্রকাশের বিষয়ে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না? এর কোনো উত্তর দেননি তিনি।
নগ্ন নারী ও স্বাক্ষর
এপস্টেইনকে লেখা ট্রাম্পের চিঠির বিষয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ সালে জেফরি এপস্টেইন তাঁর ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে যেসব শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছিলেন, তারই একটি ছিল ট্রাম্পের চিঠিটি। চিঠিতে ট্রাম্পের স্বাক্ষরও ছিল। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, তারা চিঠিটি খতিয়ে দেখেছে, তবে এর কোনো ছবি তারা ছাপায়নি।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এপস্টেইনকে পাঠানো চিঠিতে একজন নগ্ন নারীর দেহের অবয়ব আঁকা ছিল। অবয়বটি মার্কার দিয়ে আঁকা হয়েছে। এর ভেতর টাইপরাইটারে কয়েকটি বাক্য লেখা হয়েছে।
চিঠির শেষে লেখা আছে, 'শুভ জন্মদিন—প্রতিটি দিনই যেন আরেকটি সুন্দর গোপন রহস্য হয়ে ওঠে।'
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন প্রকাশের পর ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, চিঠিটি যে সম্পূর্ণ ভুয়া, সে কথা হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সম্পাদককে সরাসরি জানিয়েছেন।
আরেকটি পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, 'এটা আমার ভাষা নয়। আমার কথা নয়। আমি আজ পর্যন্ত কখনো ছবি আঁকিনি। আমি নারীদের ছবি আঁকি না।'
ট্রাম্প অস্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো অতীতে ট্রাম্পের আঁকা একাধিক স্কেচ প্রকাশ করেছে, যেগুলোর বেশির ভাগই ২০০০-এর দশকের শুরুতে করা। সে সময় ট্রাম্প তাঁর তারকাখ্যাতি কাজে লাগিয়ে দাতব্য কাজে ওই স্কেচগুলো দান করেছিলেন।
Comments