সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। জব্দ করা সম্পদের মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রায় ৫ হাজার শতাংশ জমি, গাজী টায়ারের কারখানা ও আরও বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা।
এর আগে গত ৮ জুলাই সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত এই সম্পত্তি জব্দের আদেশ দেন। টিবিএস ওই আবেদনের কপি ও আদালতের আদেশপত্র দেখেছে।
সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, গোলাম দস্তগীর গাজী জোরপূর্বক জমি দখল, জালিয়াতি, হুন্ডি ও আমদানি-রপ্তানিতে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে এই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর গাজী গ্রুপসহ ১৭টি বড় প্রতিষ্ঠানের অবৈধ সম্পদ ও অর্থপাচারের অনুসন্ধানে নামে সিআইডি।
সিআইডি'র প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিপুল পরিমাণে অবৈধ সম্পত্তির মালিক দস্তগীর গাজী। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার খাদুন এলাকায় তার নামে ৬৯টি দলিলে ৪ হাজার ৮৭৯ শতাংশ জমি রয়েছে। দলিল অনুযায়ী এসব জমির মূল্য ১৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা দেখানো হলেও প্রকৃত বাজারমূল্য অনেক বেশি। এই জমির ওপর গাজী গ্রুপের বিভিন্ন স্থাপনা, বিশেষ করে গাজী টায়ারস কারখানা নির্মিত হয়েছে।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাজধানীর শান্তিনগরে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে জুলাই মাসে রোমান মিয়া নামের এক স্কুলছাত্রের হত্যাকাণ্ডের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গাজীর গ্রেপ্তারের পর দুর্বৃত্তরা একাধিকবার গাজী টায়ারস কারখানায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অনুসন্ধান শেষে মানি লন্ডারিং আইনে গাজী ও তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
এদিকে ৮ জুলাই আদালত সিআইডির আবেদনের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক তিনটি আবেদনের প্রেক্ষিতে গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন ১২টি কোম্পানির শেয়ার, ৯টি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি গাড়ি ফ্রিজ করার আদেশ দেন।
এসব ফ্রিজ করা সম্পদের মোট মূল্য ২৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
পাশাপাশি গাজী ও তার স্ত্রী হাসিনা গাজীর বিদেশ যাত্রার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে— দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলাম বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছিলেন।
২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে গাজীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২২টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি মামলাই 'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের' সঙ্গে জড়িত, যার অধিকাংশই হত্যাকাণ্ডসংক্রান্ত। এছাড়া প্রতারণার অভিযোগে আরও পাঁচটি মামলার তদন্ত চলছে।
Comments