টানা তিন মাস জলাবদ্ধতায় ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের নজরুল হল

ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের আবাসিক নজরুল হলে টানা তিন মাস ধরে চলমান জলাবদ্ধতায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে প্রায় চারশ শিক্ষার্থীর জীবন। কলেজ ও কলেজের বাইরের পানি প্রবেশ, আবাসিক হল নিচু হয়ে যাওয়া এবং পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় হল চত্বরে জমে থাকা পচা ও নোংরা পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, যা দিন দিন মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পড়াশোনার পরিবেশে এই সমস্যা গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, কলেজের চারপাশের ৪/৫ টি পয়েন্ট দিয়ে পানি প্রবেশ করে এবং এই পানি নিষ্কাশিত হত পশ্চিম পাশের এলাকা দিয়ে। কিন্তু ঐ এলাকা উচু হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই কলেজ এবং আবাসিক হল নিচু হয়ে গেছে। যার ফলে যে ড্রেনেজ সিস্টেম আছে সেটা অকার্যকর হয়ে গেছে। ফলশ্রুতিতে, দীর্ঘদিন ধরে হলের ভিতরে পানি জমে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নিচতলার মেঝেতে সবসময় কাদা-পানির আস্তরণ থাকে, পচা ও নোংরা পানিতে চরম অস্বাস্থকর পরিবেশের তৈরি হয়েছে।
যদিও পানি নিস্কাশনের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে মটর লাগিয়ে পানি সেচার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত পানি প্রবেশ এবং ড্রেনেজ সিস্টেম অকার্যকর হওয়ায় এই অস্থায়ী ব্যাবস্থাও কাজে আসছে না।
হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী কামরুল হাসান কাউসার বলেন, "আমরা প্রতিদিন ভয় নিয়ে বাস করি। পানি জমে থাকা স্থানে মশা, মাছি বেড়ে গেছে। ডেঙ্গু বা অন্য কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। হলে বসবাস করাটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।"
অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, "হলের ভিতর থেকে বাহির পর্যন্ত পর্যন্ত সব জায়গায় পানি জমে আছে। গন্ধে দাঁড়ানো যায় না। পড়ালেখার পরিবেশ তো দূরের কথা, বেঁচে থাকাটাই কষ্টকর হয়ে উঠছে।"
এ বিষয়ে নজরুল হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রভোস্ট মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, "গত তিন বছর ধরে এই সমস্যা বিদ্যমান। এর স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নিবে।"
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল বাসার ভুঁইয়া এ প্রসংগে বলেন, "আমি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সমস্যাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি এবং এ বিষয়ে একটি স্থায়ী ও অস্থায়ী সমাধানের জন্য প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়েছি। অস্থায়ী সমাধান হিসেবে প্রাথমিকভাবে হল চত্বরের চারপাশে বাউন্ডারি দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে, যাতে বাইরের পানি প্রবেশ করতে না পারে। পাশাপাশি পানি বের করার জন্য একটি ওয়াকওভার নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। কিন্তু এর জন্য দুই থেকে তিন কোটি টাকা ফান্দের প্রয়োজন। স্থায়ী সমাধানের অংশ হিসেবে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে একটি মাস্টারপ্ল্যান শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাবনায় ডিগ্রি ও উচ্চ মাধ্যমিক শাখার জন্য পৃথকভাবে দুটি ১০-তলা বিশিষ্ট আবাসিক হল এবং তিনটি একাডেমিক ভবনের নির্মাণ পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমরা চলতি অর্থবছরের মধ্যেই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।"
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি অনেকবার শুনেছে তারা, কিন্তু বাস্তব পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে তারা মানববন্ধনসহ কঠোর আন্দোলনেরও কথা বলেছেন।
Comments