চাঁদপুরের কচুয়ায় সাচারের রথযাত্রায় লাখো ভক্তের ঢল

শিমুল অধিকারী সুমন, চাঁদপুরঃ জমিদার গঙ্গা গোবিন্দের স্বপ্নে আদেশ পেয়ে তৎকালিন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাচারে শুরু করা বর্তমান চাঁদপুরের কচুয়ায় এবার লাখো সনাতনীদের ঢল হয়েছে। প্রায় ১৫৮ বছর যাবৎ ধারাবাহিকভাবে প্রচলিত এই সাচার রথযাত্রা এই অঞ্চলের একটি সনাতনী মিলনমেলার ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। ২৭ জুন শুক্রবার বিকাল ৫ টায় সাচার বাজারে লাখো ভক্ত দড়ি টেনে রথ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়। যার উল্টো রথ আগামী ৪ঠা জুলাই শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে।
রথযাত্রায় আগত সনাতনীরা জানান, এখানে রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে ৩-৪শ' ভ্রাম্যমান দোকান কয়েক একর জয়গা জুড়ে গড়ে উঠে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে করে জগন্নাথ দর্শনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কেনাকাটা করা সহজ হয়। তাছাড়া সাচার জগন্নাথ মন্দিরে রথযাত্রায় এলে একই সাথে ঘিরে এখানে অবস্থিত দুর্গা মন্দির, লোকনাথ মন্দির এবং কালী মন্দিরও ঘুরে দেখা যায়। তাই বলবো সাচারের রথযাত্রা আমাদের কাছে আবেগ ও অনুভূতির স্থান।
সরজমিনে দেখা যায়, রথে সুসজ্জিত জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রাকে বাতাস দিচ্ছেন সেবায়েতগণ। আর ভক্তরা সে রথের দড়ি ধরে সুশৃঙ্খলভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। এর মাঝে ভক্তদের উৎফুল্ল করতে রথ থেকে সেবায়েতগণ ফল ফুল ছুড়ে দিচ্ছেন। তা ভক্তরা পরম আনন্দে গ্রহণ করছেন।
মন্দিরের ভক্ত সাংবাদিক রাজিব সরকার জানান,১২৭৭ বঙ্গাব্দে সাচারে এই রথের প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর থেকেই আষাঢ়ে জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রার প্রতিমূর্তি স্থাপন করে প্রথম রথ ও ফিরতি রথযাত্রা হয়ে আসছে। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে সাচারের রথটিতে দাপর, ক্রেতা ও কলিযুগের বহু নিদর্শন কাঠের খোদাই করা নকশা শোভা বর্ধন করেছিল। কিন্তু যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সৈন্যরা সৌন্দর্য মণ্ডিত সাচারের রথটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এরপর পোড়া ধ্বংসাবশেষের ওই রথটিই স্বাধীনতার পর টানা হতো। এরপর এক সময় এখানকার তৎকালীন এমপি ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহছানুল হক মিলন মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংস হয়ে যাওয়া রথটি ভারত থেকে শিল্পী এনে নতুনভাবে নির্মাণ করে দেন।
সাচার জগন্নাথ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের অর্থ সম্পাদক গনেশ চন্দ্র ধর জানান, পুরো মন্দিরের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া গরম ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে জাগো হিন্দু পরিষদ, গীতা স্কুল পরিচালনা পরিষদ, গীতা সংঘসহ একাধিক সংগঠন এখানে ক্যাম্প স্থাপন করে সেবা দিচ্ছে। কেউ কেউ ঔষুধ ও পানি এবং শরবত সরবরাহ করছে। সবার একটাই আকাঙ্খা জগন্নাথ যাতে সকল ভক্তের মনের আশা পূরণ করেন।
চাঁদপুরের কচুয়ার সাচার জগন্নাথ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব সাহা ও সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু বলেন, রথাযাত্রায় কচুয়া ও চাঁদপুর ছাড়াও পুরোদেশ ত বটেই এরসাথে ভারত,নেপাল, ভুটানসহ বহু বিদেশী সনাতনীরা এখানে চলে আসেন। এশিয়া উপমহাদেশে তাই সাচারের রথযাত্রা বেশ জনপ্রিয়। এবারো সাচার মন্দির থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত জড়ো হয়ে লাখো সনাতনী ভক্তবৃন্দ রথটানায় স্বশরীরে অংশ নিয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক ও সুধীমহলকে সাথে নিয়ে রথযাত্রা নির্বিগ্নে উদযাপন করতে আমরা কয়েক'শ সনাতনী যুবকদের সাথে নিয়ে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম তৎপর রেখেছি। মানুষের দান অনুদানে এগিয়ে নেয়া এই সাচার মন্দির দর্শনে সকল সনাতনী সবসময় আসবেন এই প্রত্যাশাই করছি।
Comments