পাঁচ দফা দাবিতে প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে তালা দিয়েছে বরিশালের ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা

আবাসন সংকটসহ পাঁচ দফা দাবিতে প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে তালা দিয়েছে বরিশালের ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি কলেজ শাট ডাউন ঘোষনা করেন তারা। পরে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্বারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় ক্যাম্পাস জুড়ে এ কর্মসূচী পালন হয়।

স্বারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা জানান, ব্রজমোহন কলেজকে দক্ষিণ বাংলার অক্সফোর্ড বলা হয়। দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছর ১৩৬ বছরে পদার্পণ করেছে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ৭১ এর স্বাধিকার আন্দোলন, ৯০ এর গণঅভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ ২৪ এর বিপ্লবে বরিশালের নেতৃত্ব দিয়েছে। বর্তমানে এই কলেজে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। কিন্তু ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর মাত্র ৫% হল সুবিধা ভোগ করে। বর্তমানে কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে একটি মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে। নিচের দাবিগুলো বাস্তবায়ন অতীব জরুরি হয়ে উঠেছে।

দাবিসমূহ হলো:

১। বহুতল বিশিষ্ট হল নির্মাণ: বর্তমানে হল সংকটের কারণে অনেক অসহায় শিক্ষার্থী হল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমান হলগুলো পাকিস্তান আমলের হওয়ায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই বহুতল বিশিষ্ট হল নির্মাণ এবং পুরোনো হলগুলো আশু সংস্কার প্রয়োজন।

২। আধুনিক লাইব্রেরি, অডিটোরিয়াম নির্মাণ এবং কলেজ গেইট আধুনিকায়ন: জ্ঞানচর্চার উৎকর্ষ সাধনের জন্য একটি ডিজিটাল ও সজ্জিত লাইব্রেরি প্রয়োজন। এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সুসজ্জিত ও আধুনিক  অডিটোরিয়াম নির্মাণ প্রয়োজন। পাশাপাশি, কলেজের গেইটগুলো নতুনভাবে নির্মাণ প্রয়োজন।

৩। জলাবদ্ধতা নিরসনে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা: বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রয়োজন।

৪। বার্ষিক বাজেট বৃদ্ধি: শতবর্ষী কলেজ হিসেবে ব্রজমোহন কলেজ পরিচালনায় যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা থেকে ব্রজমোহন কলেজ বঞ্চিত হচ্ছে। তাই পর্যাপ্ত বার্ষিক  বাজেট বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

৫। পরিবহন ও শিক্ষক সংকট নিরসন: দুঃখের বিষয় হল যে, ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর যাতায়াতের জন্য মাত্র তিনটি কলেজ বাস রয়েছে। তাই দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত বাস ও যানবাহনের ব্যবস্থা দ্রুত প্রয়োজন। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের শিক্ষক সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

এ সময় বিষয় গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ আহবান জানান শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বিএম কলেজে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করলেও ন্যূনতম আবাসন সুবিধা নেই, যা রয়েছে তার অবস্থাও বেহাল। বৃষ্টি হলে কলেজ ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতা নিরসন করে রাস্তা ও ড্রেন সংস্কারের দাবি জানান। যতদিন পর্যন্ত দাবি মানা না হবে তত দিন পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। কলেজ অধ্যক্ষ অনুরোধে আপাতত ৩ কার্য দিবসের সময় দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে এবং কলেজ শাটডাউনের আওতায় ভর্তি কার্যক্রম বাদে সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

এর আগে কতকাল ৫ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালায় শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পর বেলা ১১টায় শিক্ষার্থীরা কলেজ সংলগ্ন প্রধান সড়ক অবরোধ করে। এতে নগরীর নতুন বাজার থেকে নথুল্লাবাদ পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

অধ্যক্ষ ড. তাইজুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তিন দিনের সময় পেয়েছি। দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত আছে। আশা করছি ভালো কিছু হবে।