মোংলা নদীতে কুমির, আতঙ্কে যাত্রী ও জেলেরা

মোংলা নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলারের পাশেই সাঁতার কাটছে কুমির—সম্প্রতি এমন দৃশ্য একাধিকবার দেখা গেছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে নদীপারের সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে যাত্রীরা ও জেলেরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম শঙ্কায় রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পশুর নদী থেকে শুরু করে সুতারখালী, ঢাকী ও শিবসা নদী পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে মাঝেমধ্যে কুমির দেখা যাচ্ছে। গত সপ্তাহে পূর্ব ঢাংমারী এলাকায় মাছ ধরতে গিয়ে সুচিত্রা সরদার (৫৫) কুমিরের আক্রমণের শিকার হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোরে মোংলার জয়মনির জেলে আবেদ খান নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে যাত্রীবাহী ট্রলারের পাশেই কুমির দেখতে পান। তিনি বলেন, "এমন ঘটনা এর আগে কখনও দেখিনি। ভয়ে জাল না ফেলে আমরা ফিরে আসি।"
স্থানীয়দের দাবি, কেবল মানুষ নয়—পূর্বে গবাদিপশুও কুমিরের আক্রমণের শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালে সুন্দরবন সংলগ্ন ফকির কোনা এলাকায় খায়রুল ইসলাম মোড়ল নামে এক ব্যক্তি কুমিরের আক্রমণে প্রাণ হারান। একই বছর রাজু হাওলাদার নামের একজন যুবক নদীতে গোসল করতে গিয়ে কুমিরের কামড়ে আহত হন।
এ বিষয়ে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীর বলেন, "সুন্দরবনের কুমিরের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। ফলে খাবারের খোঁজে কিংবা আবাস সংকটে কুমিরগুলো পার্শ্ববর্তী নদীগুলোতে চলে আসছে।"
তিনি আরও বলেন, "মানুষের অনেকের মধ্যেই ভুল ধারণা থাকে যে এসব নদীতে কুমির নেই। বাস্তবে সুন্দরবনের আশপাশের সব নদীই ঝুঁকিপূর্ণ। করমজল কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত ২০৯টি কুমির অবমুক্ত করা হয়েছে। সচেতনতা ছাড়া দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়।"
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পরিবেশকর্মীরা কুমির চলাচল চিহ্নিত করে সতর্কতা বার্তা প্রচার, সাইনবোর্ড বসানো ও নিয়মিত মাইকিংয়ের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রতিদিন মোংলা নদী দিয়ে শত শত যাত্রী ও জেলে ট্রলার, মাছ ধরার নৌকা এবং মালবাহী লঞ্চে যাতায়াত করেন। এই নদীতে কুমিরের উপস্থিতি জনজীবন ও নিরাপত্তা—দুই ক্ষেত্রেই বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে।
Comments