ষড়যন্ত্রে ফেঁসে জেলে যেতে হলো হুমায়নকে

ষড়যন্ত্রে ফেঁসে জেলে যেতে হলো হুমায়নকেচাঁদপুরের শাহরাস্তিতে প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও অসীম জনপ্রিয়তাই কাল হলো ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হুমায়ন কবিরের। হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ষড়যন্ত্রে কিছু বুজে উঠার আগেই ফেঁসে গিয়ে তাকে যেতে হলো জেলে।
৪ জুন বুধবার এই প্রতিবেদকের কাছে এমন দাবীই করেন সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণপুর গ্রামের হুমায়নের এলাকার বাসিন্দারা।
জসীম উদ্দিন নামে এক মাদ্রাসার শিক্ষক বলেন, ওই ১৬ বস্তা আতপ চাউল ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণের জন্য বরাদ্দের ছিলো। যা তিনি রীতিমতো মাইকিং করে এলাকায় উপকারভোগীদের জানিয়েও ছিলেন বিতরণ করবে। কিন্তু প্রাকৃতিক দূর্যোগের অতি বৃষ্টিতে কেউই ঘর থেকে বাহির হওয়ার অবস্থায় না থাকায় পরদিন চাউলগুলো বিতরণ করা হবে তা সবাইকে জানিয়ে দেন। এর আগে মধ্য রাতেই তাকে চাউল মজুদের অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেয়া হলো। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
নরুফা বেগম নামের এক বৃদ্ধা বলেন, ওইদিন দিনের বেলায় যদি চাউল দেয়ার জন্য বস্তা থেকে খোলা হতো তাহলে সব চাউল ভিজে নষ্ট হয়ে যেতো। আর যারা চাউল নিতো তারাও ভিজে যেতো। ভিজে ভিজে চাউল নেয়ার মতো কোন পরিবেশই ছিলো না। একটা রাতও শেষ হলোনা।অতচ চাউল মজুদের ভূয়া অভিযোগ তুলে হুমায়নকে ফাঁসানো হলো, যা দুঃখজনক।
মোঃ আব্দুস ছাত্তার নামে আরেক বৃদ্ধা বলেন, হুমায়ন ৩ বারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। সামনে নির্বাচন হতে পারে। তাই হুমায়ন যাতে আর নির্বাচনে ক্লিন ইমেজ নিয়ে না দাঁড়ায় সেজন্যই তাকে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্রকারীরা প্রশাসনের কাছে ভুল উপস্থাপন করে তাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। ১৬ বস্তা চাউল দিয়ে ত আর একজনের জনপ্রিয়তা কমানো সম্ভব নয়। চাউল দেবার দিন বৃষ্টিতে পরিবেশের অবস্থা খারাপ। এখন চাউলগুলো পঁচলে কি ষড়যন্ত্রকারীরা খুশি হতো?
তিনি আরও বলেন, হুমায়ন তালিকা বুজিয়ে দিয়েই ত চাউল বরাদ্দ এনেছেন মানুষকে দেয়ার জন্য। তো তাকে যারা চাউল দিলো তারা কি উপকারভোগীর তালিকা ছাড়াই দিয়েছিলো? পরদিন সকালে চাউল দেবার কথা মাইকিং করে জানানোর পরও মধ্য রাতেই এই অবাক করা কান্ডের নাটক কেনো সাজানো হলো?
মোস্তাফিজুর রহমান নামের একজন বলেন, চাউলের বস্তা থেকে যে বৃষ্টিতে চাউল দেয়া সম্ভব হচ্ছিলো না তা উর্দ্ধতন হিসেবে চেয়ারম্যানকে জানিয়েছিলো হুমায়ন মেম্বার। এখন বৃষ্টির মধ্যে কি এগুলো পরিষদের গোডাউনে নেয়া সম্ভব? মানুষের জীবনই ত অতি বৃষ্টিতে ঐসময় বেগতিক ছিলো। অতছ রাতে প্রশাসনকে ডেকে এনে বাড়ীতে চাউল মজুদের নাটক সাজিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা ভুলভাবে উপস্থাপন করে হুমায়নকে ভিলেন বানালেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে হুমায়নের মুক্তির দাবী জানাচ্ছি।
নাছিমা বেগম বলেন, উপকারভোগীরা বৃষ্টিতে আসতে না পারায় তারাই বলেছিলো মেম্বারকে যাতে পরদিন চাউল বিতরণ করা হয়। ওনি চাউলগুলো উত্তোলন করে বাড়ীতে এনেই মাইকিং করেছে চাউল বিতরণের বিষয়ে। তাহলে মাইকিং কি কখনো চাউল আত্মসাতের জন্য করা হয়? কোন ষড়যন্ত্র কারো জনপ্রিয়তা দমিয়ে রাখতে পারেনা। প্রশাসনের লোকজনকে বাড়ীতে ভুল উপস্থাপনে দেখে হুমায়ন নিজে থেকেই হতভম্ব হয়ে কোন কথাই বলতে পারেনি। আমরা চাই এই ভালো মানুষটার অবিলম্বে মুক্তি হউক।
এ বিষয়ে সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান মো: মাহতাব উদ্দিন হেলালের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ঐ সময় ২ দিন ছুটিতে ছিলাম এবং তখন পরিষদের দায়িত্বে ছিলো প্যাণেল চেয়ারম্যান। আমার ইউনিয়ন পরিষদে সামান্য বৃষ্টিতেই নাজুক অবস্থা হয় পরিষদের। যার কারণে ৬নং ওয়ার্ডের ফেরুয়া গ্রামের জন্য ১৬ বস্তা এবং কৃষ্ণপুরের ১৬ বস্তাসহ মোট ৩২ বস্তা চাউল ইউপি সদস্যকে পরদিন বিতরণের দায়িত্ব দেন প্যানেল চেয়ারম্যান। এরমধ্যে ফেরুয়া গ্রামের ১৬ বস্তা চাউল ঢাকায় অবস্থান করা মাসুমের সাথে আলোচনা করে বিএনপি নেতা আব্দুল্লাকে উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণের জন্য বুজিয়ে দেয়া হয় এবং কৃষ্ণপুর গ্রাম মেম্বারের নিজ গ্রাম হওয়ায় তিনি অস্থায়ীভাবে বাড়ীতে নেন সবার মাঝে বিতরণের জন্য। মূলত বৃষ্টির জন্যই চাউলের বস্তাগুলো অস্থায়ীভাবে মেম্বারের বাড়িতে নিয়েছিলো। এরমধ্যে ওইদিনও দারুন বৃষ্টি হওয়ায় পরদিন বিতরণ করার পরামর্শ নিলেও রাতেই তার সাথে এই ঘটনা ঘটে গেলো। সে মূলত এজম্যাসহ আরো নানান রোগে আক্রান্ত হওয়ায় পরিস্থিতির ভুল উপস্থাপনে ঐ সময় হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলো। সে একজন ভালো মানুষ বলেই টানা দুবারসহ মোট ৩ বারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য ওই ওয়ার্ডটিতে। আশা করি এই আঁধার কেটে যাবে দ্রুতই।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল বাসার বলেন, ভিজিএফের চাউলগুলো অস্থায়ীভাবে নিজ ঘরে রাখায় আইনের ব্যতয় ঘটান হুমায়ন। ওই দিন এক সংবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ইউএনও ঘটনাস্থলে গেলে প্রাথমিকভাবে চাউল মজুতের মৌখিক অভিযোগের সত্যতা পান এবং হুমায়নকে আটক করে মামলা রুজুর নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমরা ১৬ বস্তা চাউল জব্দ করে থানা হেফাজতে এনে রেখেছি এবং হুমায়নকেও আমরা আটক করেছি।
Comments