চাঁদপুর জেলা সমাজসেবার রি-টেন্ডার

নানা অনিয়ম ও বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় চাঁদপুরের সরকারি শিশু পরিবার' ও 'বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী'দের জন্য খাদ্য, পোশাক, শিক্ষা উপকরণ, প্রসাধনী ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহের লক্ষ্যে রি-টেন্ডার আহ্বান করেছে চাঁদপুর জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়। এর আগে ' চলতি বছরের ৬ মে দরপত্র আহ্বান করার পর টেন্ডারের পুরো পক্রিয়াটি নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ স্বীকারের মতো কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আর এহেন কর্মকান্ডে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় যথাযথ কর্তৃপক্ষ রি-টেন্ডার দিতে বাধ্য হলেন।
২ জুন সোমবার রাতে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালকের বরাতে রি-টেন্ডারের এ তথ্য নিশ্চিত করেন শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারী আজিম পাটোয়ারী।
তিনি জানান, বিকালে মূল্যায়ন কমিটির বৈঠক হয় এবং এতে পূর্বের টেন্ডার পক্রিয়া বাতিল করে রি-টেন্ডার দেয়া হয়। আর এটি স্যার( জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক) বলেছেন আপনাকে (ঢাকা জার্নালের প্রতিনিধিকে) জানিয়ে দেয়ার জন্য। এর আগে ঢাকা জার্নালের এ প্রতিবেদকের কাছে পূর্বের টেন্ডার পক্রিয়াটি নিয়ে বেশ অস্বচ্ছতা ও অনিয়ম উঠে আসে। যা তিনি উপ-পরিচালককে অবগত করেন এবং তদন্তের ভিত্তিতে এই টেন্ডার বাতিল করে রি-টেন্ডার দিতে অনুরোধ জানান।
এর আগে অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের ৬ মে প্রতিষ্ঠানটি দরপত্র আহ্বান করেছিলো মর্মে খবর পাওয়া যায়। কিন্তু ওই দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশের দাবী করলেও তা জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে কিংবা দপ্তরটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ) প্রকাশের হদিস মিলেনি। এমনকি ওই দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি অসৎ উদ্দেশ্যে বহুল প্রচারের জন্য স্থানীয় কোন দৈনিকেও প্রকাশ করা হয়নি। আর এভাবেই বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ঘুমে রেখে এ সুযোগে দরপত্রের মোট ৭টি ফরম বিক্রি করা হয়। যার মধ্যে দুটি ভোলা জেলার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ক্রয় করা হয়েছিলো। বাকি পাঁচটি স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা ক্রয় করেন। সে দরপত্র ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, গাজী ট্রেডার্স- ভোলা, রিমা এন্টারপ্রাইজ- ভোলা এবং চাঁদপুরের রহমান ব্রাদার্স, হারুনুর রশিদ হাওলাদার, সেলিম খান, সোহাগ মেডিকেল হল ও নারায়ণ ভান্ডার।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ভোলা জেলার ২ টি ছাড়া বাকি পাঁচটি প্রতিষ্ঠান স্থানীয়ভাবে পরিচিত এবং এদের নামে পূর্বেও অনিয়ম ও নিম্নমানের পণ্য সরবরাহের জন্য একাধিকবার গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়ে জেলাজুড়ে বিষয়গুলো বেশ আলোচিত ছিলো। অপর দিকে জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের বর্তমান উপপরিচালক পূর্বে ভোলা জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সেই কর্মস্থল এলাকার ২টি প্রতিষ্ঠান এখানে এসে দরপত্র ক্রয়ের বিষয়টি নিয়েও ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের কিসমত এন্টার প্রাইজের আব্দুল্লা আল মানসুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি কোথাও দেখা যায়নি। আমরা জানতে পারি, যখন জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। এটা একটা চরম অন্যায়। আমরা বার বার জানতে চাইলেও পরে জানানো হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলো। তবে এখন রি-টেন্ডার দেয়ায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
একই সুরে কথা বললেন মাঝী এন্টার প্রাইজের লোকজন এবং এম এইচ এন্টার প্রাইজের দেওয়ান ইকরামুল হাসান। ইকরামুল বলেন, শুধু রি-টেন্ডারই নয়। বরং পূর্বের দরপত্রে কারা সব আড়াল করতে চেয়েছিলো সেই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক তদন্তের দাবী জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ঢাকা জার্নালের এ প্রতিনিধির সাথে খোলামেলা আলোচনা করেছেন চাঁদপুর জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম।
তিনি জানান, আমরা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করেছিলাম। ২টি জাতীয় পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন দিয়েছি। যেখানে ৭ টি ফর্মের মাধ্যমে দরপত্রগুলো সব বিক্রি হয়েছিলো। কিন্তু ভোলার ২টি প্রতিষ্ঠান এখানে কিভাবে আসলো তা প্রকৃতপক্ষে কাকতালীয়। এছাড়া বাকি ৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সোহাগ মেডিকেল হল ও নারায়ণ ভান্ডার বাদে বাকিগুলো শিলন্দিয়া এলাকার বাসিন্দারা সবাই আওয়ামীলীগসহ অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং তাদের কাজের মান নিয়ে নানা অনিময় বিতর্কের বিষয়টি আমি পূর্বে অবগত ছিলাম না। আর দরপত্রের বিজ্ঞপ্তিটি ওয়েবসাইটে না দেয়ার বিষয়টি আমার অগোচরে ভুল হয়ে গেছে যা একেবারের অনিচ্ছাকৃত। মূলত আমি ওই সময় ছুটিতে ছিলাম বলেই তাতে লক্ষ্য রাখতে পারিনি। তবে এসব বিষয়েই আমরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মূল্যায়ন কমিটির বৈঠক শেষে যাচাই-বাছাই করে রি-টেন্ডার দিয়েছি। আশা করছি এবার পুরো প্রক্রিয়াটির স্বচ্ছতা নিয়ে হবে এবং আর কোন প্রশ্ন বা বিতর্ক তৈরি হবেনা।
এ বিষয়ে তাৎক্ষণি টেন্ডার বাতিল হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কারোরি বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Comments