কারাবন্দী বুশরা বিবির জীবন নিয়ে জাতিসংঘের গুরুতর উদ্বেগ
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির বর্তমান কারাবন্দী অবস্থা এবং সেখানের পরিবেশ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার এলিস জিল এডওয়ার্ডস।
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বুশরা বিবিকে যে পরিবেশে আটকে রাখা হয়েছে তা তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। এই শোচনীয় পরিস্থিতি নিরসনে তিনি পাকিস্তান সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।
গত জানুয়ারি মাসে একটি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ইমরান খানকে ১৪ বছর এবং বুশরা বিবিকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়াও সম্প্রতি তোশাখানা মামলায় আদালত তাদের উভয়কে ১৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছেন।
এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জাতিসংঘের প্রতিনিধি এডওয়ার্ডস উল্লেখ করেছেন যে, রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হলো মিসেস বিবির স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং তাকে এমন একটি স্থানে রাখা যা মানুষের মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি অভিযোগ করেন যে, বুশরা বিবিকে বর্তমানে একটি অত্যন্ত ছোট ও অপরিচ্ছন্ন সেলে বন্দী করে রাখা হয়েছে।
ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ওই সেলটি দীর্ঘ সময় অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের একেবারেই নিচে। এডওয়ার্ডস স্পষ্ট করে বলেন যে, কোনো আটক ব্যক্তিকে অসহনীয় গরম, দূষিত খাদ্য বা পানি কিংবা যথাযথ চিকিৎসার অভাবের মতো পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী।
জাতিসংঘের এই বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ইতিমধেই পাকিস্তান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বুশরা বিবির শারীরিক অবস্থা ও কারাপরিবেশের বিষয়ে অবহিত করেছেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি ৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কারাজীবন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি তখন মন্তব্য করেছিলেন যে, ইমরান খানকে যে পরিবেশে রাখা হয়েছে তা অত্যাচার এবং অমানবিক বা অমর্যাদাপূর্ণ আচরণের শামিল হতে পারে। তিনি আবারও পাকিস্তান সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবির আটক পরিস্থিতি যেন অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ন্যূনতম মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
বর্তমানে বুশরা বিবির চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে কি না সে বিষয়ে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সুস্পষ্ট জবাব পাওয়া যায়নি। ইমরানের দল পিটিআই নেতা-কর্মীরাও বেশ কিছুদিন ধরে বুশরা বিবির খাবারে বিষপ্রয়োগ বা অন্য কোনো উপায়ে ক্ষতি করার আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন, যা জাতিসংঘের এই নতুন বিবৃতির পর আরও জোরালো রূপ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক এই চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার তাদের কারাপরিবেশে কোনো পরিবর্তন আনে কি না, সেদিকেই এখন নজর রাখছে বিশ্ব সম্প্রদায়।
সূত্র: এএফপি
Comments