নোবেলজয়ী চীনের প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী চেন নিং ইয়াং মারা গেছেন

বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী চীনা পদার্থবিদ নোবেল বিজয়ী চেন নিং ইয়াং ১০৩ বছর বয়সে মারা গেছেন। শনিবার চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সিসিটিভির প্রকাশিত এক শোকবার্তায় বলা হয়েছে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে চীনা এই নোবেলজয়ী মারা গেছেন। চেন নিং ইয়াং তার সহকর্মী তাত্ত্বিক পদার্থবিদ লি স্যুং-ডাও যৌথভাবে ১৯৫৭ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। পদার্থের মৌলিক উপাদান 'প্যারিটি ল' বা সাম্য নীতির ওপর গবেষণার জন্য নোবেল পান তিনি।
বেইজিংয়ের খ্যাতনামা সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন ইয়াং। একই প্রতিষ্ঠানের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডির সম্মানসূচক ডিনের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ১৯২২ সালে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় আনহুই প্রদেশে জন্ম নেওয়া ইয়াং ছিলেন পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে বড়। তিনি বেড়ে উঠেছেন সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে, যেখানে তার বাবা ছিলেন গণিতের অধ্যাপক।
কৈশোরে ইয়াং তার বাবা-মায়ের কাছে নোবেল পুরস্কার জয়ের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিলেন। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে সেই স্বপ্ন পূরণ করেন তিনি। সহকর্মী লিকে সঙ্গে নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের প্যারিটি নীতির ওপর গবেষণার কারণে ১৯৫৭ সালে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান তারা।
নোবেল কমিটি তাদের গবেষণাকে ''তীক্ষ্ণ অনুসন্ধান, যা পদার্থবিজ্ঞানের প্রাথমিক কণিকা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের পথ দেখিয়েছে'' বলে প্রশংসা করেছিল।
ইয়াং ১৯৪২ সালে কুনমিংয়ের ন্যাশনাল সাউথওয়েস্ট অ্যাসোসিয়েটেড ইউনিভার্সিটি থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
চীন-জাপান যুদ্ধের শেষে তিনি সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলোশিপে যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। সেখানে তিনি ইতালীয় পদার্থবিদ এনরিকো ফারমির অধীনে কাজ করেন। ইতালীয় এই অধ্যাপক বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর উদ্ভাবন করেন।
দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ কর্মজীবনে ইয়াং পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় সব শাখায় কাজ করেছেন। তবে পরিসংখ্যানগত বলবিদ্যা ও সাম্যনীতির ক্ষেত্রে বিশেষ আগ্রহ ছিল তার। ইয়াং ১৯৫৭ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন স্মারক পুরস্কার এবং ১৯৫৮ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৫০ সালে প্রথম স্ত্রী চি লি তুকে বিয়ে করেন ইয়াং। তাদের সংসারে তিন সন্তান ছিল। ২০০৩ সালে তুর মৃত্যুর পর ইয়াং দ্বিতীয় স্ত্রী ওয়েং ফানকে বিয়ে করেন। এই স্ত্রী তার চেয়ে বয়সে ৫০ বছরেরও বেশি ছোট। দু'জনের প্রথম পরিচয় হয় ১৯৯৫ সালে।
ওই সময় ওয়েং পদার্থবিদ্যার ছাত্রী ছিলেন। ২০০৪ সালে পুনরায় দেখা হয় তাদের। সেই সময় ইয়াং বলেছিলেন, তিনি ওয়েংকে ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত শেষ আশীর্বাদ বলে মনে করেন।
Comments