গাজায় গণহত্যার মধ্যে হোয়াইট হাউসে বসছেন ট্রাম্প-নেতানিয়াহু

গাজায় চলমান গণহত্যার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আতিথ্য দেবেন। বিবিসি জানিয়েছে, আলোচনার সময় গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি নতুন শান্তি পরিকল্পনার ওপর জোর দেবেন ট্রাম্প।
সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনার কথা জানিয়ে বলেন, 'আমি মনে করি, আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে।' কিন্তু নেতানিয়াহু গতকাল রোববার বলেন, 'এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।' অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, তাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে (ট্রাম্পের) প্রস্তাবটি পাঠানো হয়নি।
মার্কিন ও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত পরিকল্পনার ফাঁস হওয়া তথ্য অনুসারে, চুক্তি নিশ্চিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সকল বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাদের ফেরত পাঠানোর পর ইসরায়েল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শত শত ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে।
ফাঁস হওয়া তথ্যে আরও ইঙ্গিত দেওয়া হয়, শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হামাস সদস্যদের 'দায়মুক্তি এবং গাজা থেকে নিরাপদে বেরিয়ে আসার সুযোগ' দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না। সেই সঙ্গে দখলদার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ধীরে ধীরে গাজা ত্যাগ করবে এবং গাজায় একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসবে।
নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার ফাঁস হওয়া বিস্তারিত তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, 'হামাসকে দায়মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। যদি হামাস নেতাদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়, যদি তারা যুদ্ধ শেষ করে এবং সমস্ত জিম্মিকে মুক্তি দেয়, তাহলে আমরা তাদের ছেড়ে দেব।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি মনে করি, এই সবকিছুই পরিকল্পনার অংশ। আমি এটিকে আগে থেকে বলতে যাচ্ছি না কারণ আমরা এখনো আলোচনায় আছি।'
এই পরিকল্পনাটি নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানের একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বলে মনে হচ্ছে। তারা কয়েকদিন আগেও গাজার ২১ লাখ মানুষকে স্থানান্তরিত করার পক্ষে ছিলেন।
এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একই সময়ে ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
চলতি বছরের শুরুতে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর ২৭ মে থেকে ইসরায়েল জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে এড়িয়ে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে একটি পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করেছে। এতে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপের পর অঞ্চলটিতে দুর্ভিক্ষ আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপরও গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হচ্ছে।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।
Comments