সুনামগঞ্জে ১৫ দিনব্যাপী ‘পরিচ্ছন্নতা পক্ষ’র উদ্বোধন: পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে নাগরিক ঐক্যের ডাক
'পরিচ্ছন্ন পৌরসভা, সুস্থ নগরজীবন'- এই স্লোগানকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জ পৌরসভাকে একটি আধুনিক, স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শুরু হয়েছে 'পরিচ্ছন্নতা পক্ষ-২০২৫'। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সুনামগঞ্জ পৌরসভার আয়োজনে বর্ণাঢ্য র্যালি, নাগরিক সমাবেশ ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে এই অভিযানের শুভ উদ্বোধন করা হয়।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসনরাজা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। নাগরিক সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মতিউর রহমান খান।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কালী কৃষ্ণ পাল ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার দাসের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাতক চাকমা এবং সৈয়দ মহিবুল ইসলাম।
উন্মুক্ত আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন আব্দুল আউয়াল, ব্যাংক কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম লিটন, শিক্ষক লিপন, সাংবাদিক মুহাম্মদ আমিনুল হক, কর্ণ বাবু দাস, সোহানুর রহমান, স্কাউট লিডার রাজিব এবং নারী উদ্যোক্তা তৃষ্ণা আক্তারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, 'পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ এবং সুস্থ নগর জীবনের চাবিকাঠি। ড্রেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ও রাস্তাঘাট থেকে আবর্জনা অপসারণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। একইসাথে নগরবাসীকে পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করেন। যত্রতত্র ভাবে ময়লা আবর্জনা না ফেলে ডাস্টবিন ব্যবহারের অনুরোধ করেন আয়োজকরা।'
বক্তারা আরও বলেন, 'নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলার অভ্যাস করলেই একটি বসবাসযোগ্য ও সুন্দর শহর নিশ্চিত করা সম্ভব। সুনামগঞ্জকে শহরকে আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ করে গড়ে তুলতে হলে আজ থেকেই আমাদের সচেতন হতে হবে।'
পৌরসভার প্রশাসক মো. মতিউর রহমান খান বলেন, 'সুনামগঞ্জ শহরে পা দিলেই আমরা দেখি যে, গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে ময়লা আবর্জনা জমা করে রাখা হয়েছে। রাস্তায় কাগজের টুকরো, পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদি পড়ে আছে। কোথাও কোথাও দেখবেন রাস্তার পাশে ডাস্টবিন থাকার পরও মানুষজন সড়কে কিংবা ড্রেনে ময়লা আবর্জনা ফেলছেন। এতে করে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবে পৌরসভা। কিন্তু এখানে নাগরিকদের অনেক দায়দায়িত্ব আছে। তাদের অভ্যাসের পরিবর্তন আনতে হবে। পৌরসভায় ২৬ জন ঝাড়ুদার ও ২১ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ মোট ৪৭ জনের একটা টিম পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে। তাদের পক্ষে তো শুধুমাত্র শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই একটি পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তুলা সম্ভব হবে।'
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, 'একটি শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখা কেবল পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের প্রত্যেকের নাগরিক ও নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলার অভ্যাস করলেই কেবল একটি বসবাসযোগ্য ও সুন্দর শহর নিশ্চিত করা সম্ভব।'
তিনি আরও বলেন, 'সুনামগঞ্জ জেলা পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিত। এর সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে হলে ড্রেন বা যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে। এই ১৫ দিনের পরিচ্ছন্নতা পক্ষ কেবল একটি সূচনা মাত্র; আমরা চাই নাগরিকরা এই অভ্যাস যেন সারা বছর বজায় রাখেন। সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুনামগঞ্জকে একটি পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।'
নাগরিক সমাবেশ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। একইসাথে সড়কে ফেলে রাখা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়। এতে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী, গণমাধ্যমকর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, রেস্টুরেন্ট মালিক এবং বিপুল সংখ্যক স্কাউট সদস্য অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, আগামী ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুনামগঞ্জ পৌর এলাকায় এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
Comments