ছেলের বিলাসী জীবনযাত্রার জেরে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

ছেলের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালের পর দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত এবং কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক বিক্ষোভের জেরে এবার পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী লুভসান্নামস্রেইন ওয়ুন-এরদেন। আজ মঙ্গলবার সংসদে আস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর পদটাই হারাতে হলো তাঁকে। ছেলের বিলাসবহুল জীবন সবার সামনে উন্মুক্ত হওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রী দাবি করছেন, তিনি কোনো দুর্নীতি কিংবা অন্যায় করেননি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ওয়ুন-এরদেনের ছেলে এবং ছেলের বান্ধবী তাদের বাগদানের ছুটিতে একটি কালো ডিওর কাঁধব্যাগ এবং বেশ কয়েকটি শপিং ব্যাগ নিয়ে হাঁটছেন। বিক্ষোভকারীরা প্রশ্ন তুলেছেন, ওয়ুন-এরদেনের পরিবার কীভাবে এত বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে পারে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির দুর্নীতি দমন সংস্থা তাদের আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখছে।
দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে রাজধানী ওলানবাটরে কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভের পর সংসদে গোপন আস্থা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সংসদে ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওয়ুন-এরদেন বলেছেন, 'মহামারি, যুদ্ধ ও শুল্কসহ বিভিন্ন কঠিন সময়ে আমার দেশ ও জনগণের সেবা করা সম্মানের বিষয়।'
তবে ৩০ দিনের মধ্যে তাঁর উত্তরসূরি নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
উত্তর এশিয়ার স্থলবেষ্টিত দেশ মঙ্গোলিয়া কয়েক দশক ধরে গভীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। দেশের অনেকেই বিশ্বাস করেন, ধনী-অভিজাতরা সাধারণ জনগণের ব্যয়ে বছরের পর বছর ধরে কয়লা খনির উত্থানের মুনাফা জমা করছে। ২০২১ সালে ওয়ুন-এরদেন ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মঙ্গোলিয়া ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতি ধারণা সূচকে তলানিতে নেমে এসেছে।
দেশটি ঘন ঘন বিক্ষোভ ও অস্থিরতা দেখেছে এবং গত সপ্তাহে ওলানবাটোরে শত শত তরুণ তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে। অভিয়োগ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা একজন সরকারি কর্মচারীর সামর্থ্যের চেয়েও বেশি বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। এই অভিযোগ জনরোষকে আরও বাড়িয়ে তোলে। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলেছে, তারা 'তীব্রভাবে' অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এসব অভিযোগকে 'অপমানজনক' বলে উল্লেখ করেছে তারা।
এবার গোপন ব্যালটে প্রায় ৮২ জন আইনপ্রণেতা অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে ৪৪ জন ওয়ুন-এরদেনের প্রতি আস্থা বজায় রাখার পক্ষে ভোট দেন এবং ৩৮ জন বিপক্ষে ভোট দেন। ১২৬ আসনের সংসদ থেকে প্রয়োজনীয় ৬৪ ভোট পেতে ব্যর্থ হওয়ায় ওয়ুন-এরদেন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এর আগে গতকাল সোমবার শত শত তরুণ বিক্ষোভকারী সংসদ ভবনের বাইরের চত্বরে ভিড় করে। তারা সাদা প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল করে এবং স্লোগান দেয়, 'পদত্যাগ করা সহজ।' আয়োজক ২৪ বছর বয়সী উলামসাইখান ওটগন বলেছেন, সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভ 'সর্বত্র প্রমাণ করেছে, তরুণরা সমাজে অন্যায়ের প্রতি খুবই সংবেদনশীল।'
Comments