পঞ্চাশেও উজ্জ্বল কাজল

বেখুদি দিয়ে বলিউডে তাঁর যাত্রা শুরু, আর বাজিগর দিয়ে নিজের আসন শক্ত করে ফেলেন। তারপর এলো 'দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে'-এর সিমরান আর 'কুচ কুচ হোতা হ্যায়'-এর অঞ্জলি। দুই চরিত্র– যা এক প্রজন্মের দর্শকের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে গেঁথে গেছে। সময় বদলেছে, বলিউডে অনেক নতুন মুখ এসেছে, কিন্তু কাজলের সেই হাসি, চোখের কোণে দুষ্টু ঝিলিক, আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠস্বর আর সহজাত অভিনয়– এসবের মায়া আজও ফিকে হয়নি।
আজ তিনি পঞ্চাশ পেরিয়েছেন, অথচ মুখের রেখায় সময়ের ছাপ নেই বললেই চলে। যেন সময়ও তাঁর সৌন্দর্য ও তারকাস্বভাবের কাছে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। রূপালি পর্দার কাজল এখন শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তিনি এক অনুপ্রেরণার নাম, এক ভালোবাসার সূত্র। বলিউডের উজ্জ্বল এক অধ্যায় তাঁর নামে লেখা।
এই মুহূর্তে বলিউডে ৩৩ বছরের পথচলা সম্পন্ন করেছেন তিনি। নিজের এই দীর্ঘ যাত্রাপথের অনুভূতি ভাগ করে নিতে গিয়ে কাজল বলেন, 'বিশ্বাসই হচ্ছে না ৩০ বছর পার করে ফেলেছি। কীভাবে এতগুলো বছর কেটে গেল, বুঝতেই পারিনি। নিজের এই ভ্রমণ নিয়ে আমি আপ্লুত। মনে হয় যেন এই গতকালই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। অথচ এখন বাচ্চারা বড় হয়ে গেছে, সংসার চলেছে নিজের ছন্দে। সেই দিকেই তাকিয়ে বুঝতে পারি, সময় সত্যিই পেরিয়ে গেছে।'
একজন মানুষ যখন অভিনয় দিয়ে সময়কে ছাপিয়ে যেতে পারেন, তখন তিনি কেবল তারকা হয়ে থাকেন না, হয়ে ওঠেন এক চলমান চলচ্চিত্রের মতো। কাজল ঠিক তেমনই। তাঁর প্রতিটি সিনেমা যেন জীবনের আরেকটি অধ্যায়। আর এখন, সময়ের নতুন ভাষ্য– ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নতুন রূপে ধরা দিচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি কাজ করেছেন ভিন্নধর্মী কিছু সিরিজে, যেখানে নিজের অভিনয়শৈলীকে নতুনভাবে তৈরি করেছেন।
কাজল জানালেন, 'ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নির্মাতা ও অভিনেতাদের বিভিন্ন ফরম্যাট নিয়ে কাটাছেঁড়া করার সুযোগ করে দেয়। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। এই সিরিজে আমি নিজেকে একেবারে নতুন করে খুঁজে পেয়েছি।'
কিছুদিন আগে তাঁকে দেখা গিয়েছিল ভৌতিক ঘরানার সিনেমা 'মা'-তে। যদিও ছবিটি মুক্তির পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে, তবুও কাজল অভিনীত চরিত্রটি দর্শকদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়। এবার তাঁকে দেখা যাবে একেবারে ভিন্ন ঘরানার ছবি 'সরজমিন'-এ। ছবিটি পরিচালনা করেছেন অভিনেতা বোমান ইরানির ছেলে কায়োজে ইরানি। ছবিতে কাজলের পাশাপাশি আছেন দক্ষিণী সুপারস্টার পৃথ্বীরাজ সুকুমারন ও নবাগত অভিনেতা ইব্রাহিম আলি খান।
'সরজমিন' একটি সেনাবাহিনীকেন্দ্রিক গল্প, যা নেওয়া হয়েছে মালয়ালমের হিট সিনেমা 'হৃদয়ম' থেকে। ছবির গল্প হৃদয়ম থেকে নেওয়া হলেও বলিউডের নিজস্ব আবেগ এখানে রয়েছে বলেই জানিয়েছেন প্রযোজনা সংস্থা থেকে।
সিনেমাটি নিয়ে কাজল বলেন, 'এই ছবিতে একটা আবেগের গভীরতা আছে, যা আমাকে খুব টেনেছে। এই চরিত্রটি আমার কাছে খুব ব্যক্তিগত এবং গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি স্তরে চরিত্রটি একেক রকম অনুভূতির বহির্প্রকাশ। অন্যদিকে সিনেমায় আমার এক সময়ের নায়ক সাইফ আলী খানের পূত্র ইব্রাহিম আলী খানকে এই জটিল চরিত্রে দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। ওর মধ্যে এক ধরনের নিষ্পাপ ছাপ আছে, যা চরিত্রটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে।'
এই ছবিতে কাজলের চরিত্রে রয়েছে সংবেদনশীলতা, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, দায়িত্ববোধ আর মাতৃত্বের রূপ। সব মিলিয়ে এক আবেগঘন, কিন্তু শক্তিশালী চরিত্র। এ রকম চরিত্রে কাজলকে বহুদিন পরে আবার দেখা যাবে, যেটি তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে।
আজ যখন কাজলের ক্যারিয়ারকে ফিরে দেখি, তখন তাঁর প্রতিটি কাজ যেন একেকটি মাইলফলক। তিনি কখনো ছিলেন চঞ্চল প্রেমিকা, কখনও শক্ত নারী চরিত্রে, কখনও মা, আবার কখনও এক ক্ল্যাসিক প্রেমের প্রতিমূর্তি। আর এই প্রতিটি পর্যায়ে কাজল নিজেকে ভেঙেছেন, গড়েছেন, আবারও নতুন করে নির্মাণ করেছেন।
কাজলের ক্যারিয়ার মানেই তারুণ্যের উচ্ছ্বাস আর পরিপক্বতার সংযোজন। তাঁর অভিনয় মানেই মুগ্ধতা আর চোখের পাতায় জমে থাকা গল্প। আজ তিনি পঞ্চাশেও সেই উজ্জ্বলতা ধরে রেখেছেন, যেটা একমাত্র কাজলের পক্ষেই সম্ভব।
Comments