সুনামগঞ্জে ফের দখল হয়েছে ফুটপাত, ভোগান্তিতে পৌরবাসী
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর ফুটপাত আবারও সারিবদ্ধভাবে দখল করে নিয়েছে অবৈধ ভাসমান ব্যবসায়ীরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব দোকানের সংখ্যা বাড়ায় ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কের একটি বড় অংশও দিনদিন দখল হচ্ছে। ফলে পথচারীদের হাঁটাচলারও সুযোগ নেই। এতে শহরে প্রায়ই দেখা দিচ্ছে যানজট।
তবে, 'ফুটপাত অবৈধ দখলদারমুক্ত করতে বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় জেলা ও পৌর প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু অভিযান শেষ হতে না হতেই ব্যবসায়ীরা পুনরায় দোকান সাজিয়ে বসছেন। সচেতন মহলের মতে, প্রশাসনের এই প্রচেষ্টা এখন এক ধরনের 'চোর-পুলিশ' খেলায় পরিণত হয়েছে। হকার আর যানজট—এই দুটিই এখন হয়ে উঠেছে নগরবাসীর প্রধান ভোগান্তির কারণ। এই দুই ভোগান্তির কারণ থেকে রেহাই মিলছে না কিছুতেই। বরং দিন দিন ভোগান্তি আরও তীব্র হচ্ছে। এ অবস্থা নিরসনে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নাগরিকরা।'
সরেজমিনে দেখা গেছে, 'শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট (আলফাত স্কয়ার), মধ্য বাজার, সুনামগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের দুই পাশে, সদর মডেল থানার সামনের সড়ক, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের দুইপাশ, কালীবাড়ি পয়েন্ট, চেম্বার ভবনের সামনে, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, কোর্ট পয়েন্ট, ওয়েজখালি, ষোলঘর, উকিলপাড়া, কাজির পয়েন্ট ও হাসপাতাল পয়েন্টসহ একাধিক জায়গায় ভাসমান ব্যবসায়ীরা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই ফল ও সবজির দোকান রয়েছে। ফুটপাত দখল হওয়া পথচারীরা বাধ্য হচ্ছেন মূল সড়কে নামতে, যা যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।'
শহরের জামতলার বাসিন্দা মো. আরিয়ান আহমেদ বলেন, 'বিগত সময়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের যে অভিযানগুলো হয়েছে তা কেবল লোক দেখানো। উচ্ছেদ অভিযানের পরপরই সব আবার আগের মতো হয়ে যায়। প্রশাসন যদি কঠোর না হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে না।'
পথচারী নাজিম উদ্দীন বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরেই শহরের ফুটপাত দখল হচ্ছে। কিন্তু স্থায়ী কোন সমাধান হচ্ছে না। ফুটপাতে ফলের ব্যবসায়ী, কলা ব্যবসায়ী, সবজি ব্যবসায়ী সবাই মিলেমিশে দখল করেছে। এতে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, আমাদের চলাফেরায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।'
পথচারী শিপন আহমেদ বলেন, 'জেলা প্রশাসকের বাসভবন, সদর মডেল থানার সামনের সড়কের ফুটপাত দখল হয়েছে, এইটা অতন্ত্য দুঃখজনক। শীঘ্রই এসব দোকানপাট উচ্ছেদ করে ফুটপাত দখল মুক্ত করার দাবি জানান তিনি।'
ষোলঘরের বাসিন্দা সাব্বির আহমেদ বলেন, 'অস্থায়ী ফলের দোকান, সবজির দোকান নির্দিষ্ট স্থানে বসার সুব্যবস্থা করে দেয়া হোক। যাতে সবাই এক সাথে সারিবদ্ধভাবে বসে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। যখন এরা রাস্তা ছেড়ে চলে যাবে তখনই প্রশস্ত রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তখন আর যানজটও আর থাকবে না।'
সাইদুল ইসলাম নামের এক পথচারী বলেন, 'ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে ফলের ও সবজির দোকান বসানো হয়েছে। একই সাথে তাঁরা সড়কের মধ্যে তাদের বিভিন্ন মালামালও রাখছেন। যার কারণে সড়কের প্রসস্থ কমছে। এই কারণে সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ফুটপাত দখল মুক্ত করে শহরকে যানজটমুক্ত করা দাবিও জানান তিনি।'
হাসননগরে বাসিন্দা লতিফ মিয়া বলেন, 'সড়কের ওপর অবৈধভাবে দোকান বসার কারণে যানজট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ৫ মিনিটের দূরত্ব যেতে ২০ মিনিট লাগছে। শহরের প্রধান সমস্যা এখন এটি। আমরা চাই হকারদের জন্য বিকল্প একটি জায়গা বরাদ্দ করে ফুটপাত উন্মুক্ত করা হোক। এভাবে চলতে থাকলে শহর তার সৌন্দর্য হারাবে। এগুলো চলতে দেওয়া যাবে না।'
সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক মো. মতিউর রহমান খান বলেন, 'ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য আমরা শীঘ্রই কঠোর অভিযান পরিচালনা করব। তবে এই সমস্যা সমাধানে পৌরবাসীসহ সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।'
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, 'ফল ব্যবসায়ী যাঁরা আছেন তাদেরকে আমরা একটা জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম, কিন্তু তাঁরা সেখানে যেতে রাজি না। পূর্বের নির্ধারিত সেই জায়গায়ও এখন দোকানপাট হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যদি যেকোনো একটা জায়গা নির্ধারণ করে আমাদের জানায় যে, তাঁরা সেখানে ব্যবসা পরিচালনা করবে তাহলে আমরা সেই বিষয়ে উদ্যোগ নিবো।'
তিনি আরও বলেন, 'জেলা ও পৌর প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আমরা প্রয়োজনে আবারও উচ্ছেদ অভিযান করবো। আমরা চাই শহরের ফুটপাত দখল মুক্ত থাকুক। ফুটপাত দখল মুক্ত থাকলে শহরটাও সুন্দর লাগবে। আমাদের আহ্বান থাকবে ফুটপাতে যেন আর দোকানপাট না বসানো হয়।'
Comments