রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এক বছরে বন্ধ হয়েছে ১১৭ কারখানা
দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এক বছরে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে ১১৭ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারখানায় কাজ করা ৫১ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন অন্যত্র কাজ পেলেও বেশির বেকার হয়ে পড়েছেন।
শিল্প পুলিশের করা একটি তালিকায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ওই তালিকায় বলা হয়েছে, স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া ৫০টি কারখানার মোট শ্রমিক সংখ্যা ৮ হাজার ৭৪৩ জন। আর অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখা ৬৭ কারখানায় শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ৪৩ হাজার। এছাড়াও এক বছরে চট্টগ্রামের ৭০টি কারখানায় ৩১৫ বার শ্রমিক অসন্তোষের মত ঘটনা ঘটেছে বলেও শিল্প পুলিশের তথ্য বলছে।
বন্ধ হওয়া এসব কারখানার তালিকায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড ও আরামিট পাওয়ার লিমিটেড এবং আলোচিত শিল্পগ্রুপ- নাসা গ্রুপের প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
আর্থিক সংকট, ঋণের পরিমাণ বেশি থাকায় ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ না পাওয়া, এলসি জটিলতা ও কাজের অর্ডার না থাকাসহ নানা কারণে এসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে বলে শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন বলেন, নানা কারণে এসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের পাওনা দিয়ে দিয়েছে।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এক বছরে চট্টগ্রামে প্রায় ২২টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে; কাজ হারিয়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশ ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক সংকট, এলসি জটিলতা, অর্ডার কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়েছে এসব কারখানা।
চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের করা তালিকা বলছে, ক্ষমতার পালাবদলের পর চট্টগ্রাম ইপিজেডসহ বিভিন্ন স্থানে যে ২২টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে তার মধ্যে এ বছরের শুরু থেকে চলতি মাস পর্যন্ত বন্ধ হয়েছে ১১টি কারখানা। এসব কারখানার শ্রমিক ৫ হাজারের বেশি।
শিল্প পুলিশের হিসাবে ২২টি কারখানা বন্ধ হলেও সংখ্যাটা আরও বেশি বলে মনে করেন অনেকে। কারণ চট্টগ্রামে গড়ে ওঠা ছোট ছোট অনেক কারখানা বড় কারখানাগুলো থেকে কাজ নিয়ে করে থাকে। কাজ না পেয়ে সেগুলোরও অনেক বন্ধ হয়েছে।
পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র হিসাবে, চট্টগ্রামে তাদের সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা ৬৯৯টি। এর মধ্যে সচল ৬১০টি, তবে বর্তমানে চালু আছে ৩৪৮টি কারখানা। বন্ধ হওয়া ২২ পোশাক কারখানার মধ্যে চট্টগ্রাম ইপিজেডে রয়েছে চারটি, যেগুলো গত পাঁচ মাসে বন্ধ হয়েছে।
চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন বলেন, বন্ধ হওয়া বেশিরভাগ কারখানার শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়েছে মালিকপক্ষ।
কারখানা বন্ধের বিষয়ে বিজিএমইএ'র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, "বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পোশাক কারখানা টিকিয়ে রাখা 'অনেক কঠিন'। খুব স্ট্রং কমপ্লায়ান্স ফ্যাক্টরি না হলে টিকে থাকা কষ্টের।
"বায়িং হাউসের মাধ্যমে যেসব ফ্যাক্টরি চলছিল তারা কোনোভাবে কুলিয়ে উঠতে পারছিল না। তার ওপর মার্কিন ট্যারিফ ঘোষণার পর অনেক অর্ডার কমে গেছে, দাম কমে গেছে…। সব মিলিয়ে একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যাচ্ছে এ খাত।"
যুক্তরাষ্ট্রের সম্পূরক শুল্কারোপের পর চট্টগ্রামের পোশাক কারখানায় বেশি প্রভাব পড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
"চট্টগ্রামের কারখানাগুলোতে আমেরিকার পণ্য বেশি তৈরি হয়। নতুন মার্কিন ট্যারিফের কারণে লাভটা আসে না। যার কারণে ব্যবসায় টিকে থাকাটা অসম্ভব। সব মিলিয়ে বড় বড় কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরিগুলো টিকে থাকলেও ছোটগুলো টিকে থাকতে পারছে না।"
বিজিএমইএ নেতা আবু তৈয়বের ভাষ্য, "কারখানা মালিকরা কঠিন সংকটে। অর্ডার না থাকায় কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এ বছর সংকট থেকে উন্নতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আগামীতে যদি বিশ্বযুদ্ধ পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসে, তাহলে পোশাক কারখানা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে।"
এছাড়া গত এক বছরে ১৩টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড ও স্টিলমিল, প্যাকেজিং কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে শিল্প পুলিশের তালিকায়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সহ-সভাপতি ও পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম রিংকু বলেন, হংকং কনভেনশন অনুযায়ী, গত ২৬ জুনের মধ্যে বাংলাদেশের সব শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডকে গ্রিন শিপইয়ার্ডে রূপান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে মাত্র ১৭টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড সেটি করতে পেরেছে। এ কারণে অনেকের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে জাহাজ আমদানি তীব্রভাবে কমে গেছে। গত আগস্টে সীতাকুণ্ডে জাহাজ আমদানির জন্য নতুন কোন এনওসি দেওয়া হয়নি। জুনে ৯০ হাজার টন ওজনের সাতটি ও জুলাইয়ে ৮০ হাজার টন ওজনের আটটি জাহাজ আনা হয়েছিল। ব্যাংকগুলো এলসি দিতে পারছে না। ঋণ দিতে পারছে না। তাই সংকটে পড়ে অনেক শিপইয়ার্ড তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।
Comments