গোপালগঞ্জে বিল জুড়ে সৌন্দর্যের আভা ছড়াচ্ছে ফুটে থাকা রাশি রাশি পদ্ম

বিল জুড়ে সৌন্দর্যের আভা ছড়াচ্ছে ফুটে থাকা রাশি রাশি পদ্ম। এসব ফুল শুধু বিল নয়, সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে প্রকৃতির। আর এমনটিই দেখা মিলছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বলাকইড় বিলে। প্রাকৃতিক ভাবে প্রস্ফুটিত এসব পদ্মের সৌন্দর্যের টানে প্রতিদিনই ভিড় করছেন অসংখ্য দর্শনার্থী।
ইট পাথর আর যান্ত্রিক জীবন থেকে কিছুটা সময়ের জন্য প্রকৃতির স্বাদ নিতে সৃস্টি হয় এক মিলন মেলার। সূর্য়্যের আভা ছাড়ানোর থেকে শুর করে সন্ধ্যা অবধি পরিবার পরিজন, বন্ধু বান্ধব আর প্রেমিক প্রেমিকা ছোট বড় নৌকা নিয়ে ভেসে বেড়ায় অপরূপ সৃষ্টি পদ্ম বিলে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের বিলবেষ্টিত গ্রাম বলাকইড়। জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ বিল ইতোমধ্যে 'পদ্মবিল' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ১৯৮৮ সালে বন্যার পর থেকে বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মে থাকে। এ সময় পুরো বিল গোলাপী আর সাদা রঙের পদ্ম ভরে ওঠে। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে প্রতিবছর দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বলাকইড় পদ্ম বিলে গিয়ে দেখা গেছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি গোপালগঞ্জের বলাকইড় পদ্মবিল। জলজ ফুলের রানী পদ্মে এখন ঢাকা চারিদিক। সূর্য উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জলজ ফুলের রানী একেকটা পদ্মের কলি ভেদ করে পাঁপড়ি মেলে নিজের সৌন্দর্যের জানান দেয় প্রকৃতির মাঝে। প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্য সব টুকু ঢেলে দিয়েছে বাতাসের তালে তালে দোল খাওয়া পদ্ম ফুলের পাতায় পাতায়। যতদূর চোখ যায় গোলাপি আর সাদা রঙের পদ্ম ফুল ৬৪টি পাপড়ি মেলে যেন স্বাগত জানায় প্রকৃতি প্রেমীদের। পদ্মা পাতার উপর জলকণার খেলার সাথে দেখা মিলবে সোনালী রং এর ব্যাঙ-এর লাফানো, ঘাস ফড়িং এর উড়াউড়ি আর সাপের এঁকে বেঁকে চলা।
পদ্ম ফুলের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার-পরিজন আর বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত নৌকায় ঘুরে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দয্য উপভোগ করেছেন দর্শনার্থীরা। কিছুটা সময়ের জন্য এ যেন অন্য জগতে হারিয়ে যাওয়া। আর অনিন্দ্য সৌন্দর্যের জলজ ফুলের রাণী পদ্ম তাদের মনের সব কষ্ট ভুলিয়ে দিচ্ছে। কেউবা নৌকায় ঘুরে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দয্য উপভোগ করেছেন আবার কেউ ক্যামেরায় বন্দি করছেন স্মৃতি।
তবে ব্যাপক হারে পদ্ম ফুল ছিড়ে নেয়ায় প্রতি বছরই কমছে পদ্মের সংখ্যা। ফলে প্রতিনিয়ত সৌন্দয হারাচ্ছে বিলটি। দুর দুরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা এ বিলে থেকে পদ্ম ফুল না ছেড়ার আহবান জানিয়েছে। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণসহ এখানে মৌসুমি পযর্টন কেন্দ্রে গড়ে তোলার দাবী করেছেন।
জুলাই-আগস্টে শুরু হয় পদ্মফুল ফোটা, থাকে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত। বছরের ৬ মাস এ বিলে অন্যান্য ফসল ফলালেও বর্ষা মৌসুমে দর্শনার্থীদের বিলে ঘুরিয়ে আয় রোজগার করছেন স্থানীয়রা। তবে, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার দর্শনার্থীদের চাপ তুলনামূলক বেশি হওয়ায় হিমশিম খেতে হয় নৌকার মালিক ও মাঝি মাল্লাদের।
দর্শনার্থী দৃষ্টি বিশ্বাস বলেন, পরিবার নিয়ে পদ্মবিলে ঘুরতে এসেছি। নৌকায় করে পুরো বিলটা ঘুরলাম। রাশি রাশি পদ্মফুল বিলটাকে পুরো ছেয়ে ফেলেছে। এ যেন এত অপরূপ দৃশ্য। এমন সৌন্দয্য দেখার জন্য সবাই এ বিলে আসা উচিত।
শিক্ষার্থী অনামিকা পাল বলেন, আমি বান্ধবীদের সাথে সাথে পদ্ম বিলে ঘুরতে এসেছি। পদ্ম ফুল দেখে খুব ভাল লাগেছে। এখানে এ আসলে বোঝাই যেতো না আমাদের প্রকৃতি এত সুন্দর। তবে ভোর বেলা না এসে বিকালে আসলে পদ্ম ফুলের সৌন্দয্য একটু বেশিই উপভোগ করা যায়।
দর্শনার্থী লাবনী রায় ও ফয়সাল আলম বলেন, এখানে আসলে পদ্ম ফুলের সৌন্দয্য উপভোগ করা যায়। কিন্তু যারা এখানে ঘুরতে আসেন তারা পদ্ম ফুল ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। এতে পদ্মের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে অন্য একজন সৌন্দয্য উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা চাই এখানে যারা আসেন তারা যেন পদ্মফুল না ছিড়ে সেই ব্যবস্থা নেয়া।
পদ্মবিল পাড়ের বাসিন্দা ও নৌকার মালিক সাইফুল বেগ বলেন, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার এখানে প্রচুর সংখ্যক দর্শনার্থী পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে ঘুরতে অাসেন। ছুটির দিনগুলো নৌকার সংকট তৈরী হয়। তারপরও আমরা সবাইকে চেষ্টা করি ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য। দর্শনার্থীদের ঘুরয়ে যে অর্থ উপার্জন করছি তা দিয়ে আমাদের সংসার চলছে।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, পদ্মবিল এলাকা ঘিরে একটি মৌসুমী পয্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখানে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা রাখা হবে। যাতে পয্যটকেরা এখানে আসলে সহজেই পদ্ম ফুলের সৌন্দয্য উপভোগ করতে পারেন।
Comments