পানের দাম না থাকায় রাজশাহীর পান চাষীদের মাথায় হাত

রাজশাহীর গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকাশক্তি কৃষি। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কৃষিতে এসেছে বৈচিত্র্য। জেলায় কৃষি খাতে জমির পরিমাণ কমলেও প্রযুক্তির ব্যবহারে ফলন ও উৎপাদন বেড়েছে। আম ও পান রাজশাহীর প্রধান দুটি অর্থকরী ফসল। আম মৌসুমি হলেও পানের উৎপাদন ও বাজার থাকে সারা বছর। আমের চেয়ে রাজশাহীর মিঠা পানের বাজারের আকার খানিকটা বড়। রাজশাহীর জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মিঠা পান দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। রাজশাহীর মিঠা পানের খ্যাতি দেশজুড়ে। সাম্প্রতিক বছরে রাজশাহীতে পান চাষ বেড়েছে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে রাজশাহীর মিঠা পানের অস্বাভাবিক দরপতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। বর্তমানে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে পান।
কোনো কোনো চাষি বলছেন, রাজশাহীর মিঠা পানের বড় বাজার ছিল মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। কিন্তু নানা জটিলতায় পান রপ্তানি হচ্ছে না। সারা দেশে খিলি পানের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হলেও মোকামগুলোতে পানের দামে ধস নেমেছে। রাজশাহীর পান ব্যাপারীদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে বলেও একাধিক চাষি অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে পানের ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদন বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় রাজশাহীর মিঠা পানের দাম কমে গেছে। দেশের অন্যান্য এলাকাতেও এবার উৎপাদন বেশি হয়েছে। বিদেশে রপ্তানি বাড়াতে পারলে পানের ন্যায্যমূল্য পেত চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, রাজশাহী জেলায় বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। রাজশাহীতে বর্তমানে প্রায় ৪৫ হাজার টি পান বরজ রয়েছে। এই পরিমাণ জমি ও বরজ থেকে বার্ষিক পান উৎপাদনের পরিমাণ ৮০ হাজার ৪৫৬ টন। মিঠা পানের বার্ষিক বাজার মূল্য ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। জেলায় তালিকাভুক্ত পান চাষির সংখ্যা ৫৪ হাজার ৭৮৮ জন। পান চাষের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কয়েক লাখ।
রাজশাহীর দুর্গাপুর, পবা, মোহনপুর ও বাগমারা এলাকায় শত শত বছর ধরে পান চাষ হয়ে আসছে। পান বেচা-কেনা ও চালানের জন্য ২০টি হাট ও ৪টি বড় মোকাম রয়েছে। প্রতিদিনই এসব মোকামে বিপুল পরিমাণ পান বিক্রি হয়।
আজ (১৬ আগষ্ট) মোহনপুর উপজেলার, মোহনপুর পানের হাটে, পোল্লাকুড়ি গ্রামের পান চাষি অনিমেষ প্রামাণিক জানান, সারা বছরই বরজ থেকে পান পাওয়া যায়। গত আগষ্ট মাসে এক বিড়া বা ৬৪টি পানপাতার দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। চলতি মাসে সেই এক বিড়া পান বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকায় আর ছোট পান ১-২ টাকা বিড়া। হাটে পান বিক্রি করে চাষিরা কিছুই নিয়ে যেতে পারছে না। তিনি জানান তার পান বরজ থেকে একদফা পান ফেলে দিয়েছেন। তিনি বলেন গতবছর এই সময় একবিঘা জমিতে এক লক্ষ টাকার পান বিক্রি করেছিলেন।এবার খুবই নাজুক অবস্থা। তিনি সরকারি সহায়তা কামনা করেন।
Comments