পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৫৭ কোম্পানি লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কমপক্ষে ৫৭টি কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের জন্য সবশেষ অর্থবছরে কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ম্যাক্রো অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার চলতি অর্থবছরে লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, লভ্যাংশ না দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আর বাকি ৫২টি উৎপাদন খাতের কোম্পানি।
২০২৫ অর্থবছরের জন্য এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি তাদের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি ২০২৪ অর্থবছরের জন্য দুটি ব্যাংক, দুটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) ও একটি বিমা কোম্পানি আর্থিক ফল প্রকাশ করেছে।
ডেটা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ২৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টি লভ্যাংশ সুপারিশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি, বস্ত্র খাতের মোট ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ১৩টি কোম্পানি তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। এছাড়া প্রকৌশল খাতের ৯টি, ওষুধ খাতের ৫টি, ব্যাংক ও এনবিএফআই খাতের ৫টি, বিদ্যুৎ, খাদ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মোট ৯টি এবং ট্যানারি, সিমেন্ট ও কাগজ খাতের ৫টি কোম্পানি কোন লভ্যাংশ ঘোষণা দিতে পারেনি।
অন্যদিকে, ৪৩টি কোম্পানি শুধুমাত্র সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, এসব কোম্পানির স্পন্সর-পরিচালকরা কোনো লভ্যাংশ পাচ্ছেন না।
তবে জেড ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয়ার বিষয়টি এড়াতে কয়েকটি কোম্পানি ১ শতাংশের কম লভ্যাংশ ঘোষণার পথ বেছে নিয়েছে।
বিশ্লেষক ও বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, গত এক বছরে ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। একই সঙ্গে উৎপাদন ব্যয় ও ইউটিলিটি খরচ বৃদ্ধি, কাঁচামাল সংকট এবং ডলার সংকট অনেক প্রতিষ্ঠানের লাভজনকতা কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে বহু কোম্পানি লোকসানে পড়েছে বা মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। নেতিবাচক রিটেইন্ড আর্নিংসের কারণে এসব প্রতিষ্ঠান লভ্যাংশ দিতে পারছে না।
বিদ্যুৎ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রকৌশল ও খাদ্য খাতে তালিকাভুক্ত প্রায় দেড় ডজন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বর্তমানে লোকসানে রয়েছে। তিন বছর আগেও অধিকাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি লাভজনক ছিল এবং নিয়মিত লভ্যাংশ দিত। কিন্তু বর্তমানে বেসরকারি খাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা, বৈদেশিক মুদ্রা সংকটসহ নানা কারণে পরিস্থিতি উল্টে গেছে।
এর মধ্যে ১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বড় অঙ্কের লোকসানের কারণে লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) টানা দুই ২৪ ও ২৫ অর্থবছরের জন্য কোন লভ্যাংশ দেয়নি। ২০০৬ সালে তালিকাভুক্তির পর এবারই প্রথম প্রতিষ্ঠানটি জেড ক্যাটাগরিতে নেমেছে। সবশেষ অর্থবছরে ডেসকোর লোকসান হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা, আর মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১,১৭২ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। ২০২৫ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান ১,২১৪ কোটি টাকা। আইসিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, লোকসানের কারণে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই আইসিবি।
এ ছাড়া পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সার্ভিসেস (ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল), ন্যাশনাল টি, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, শ্যামপুর সুগার মিলস, উসমানিয়া গ্লাস, জিল বাংলা সুগার মিলস, অ্যাটলাস বাংলাদেশ, ইস্টার্ন কেবলস ও আজিজ পাইপস লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি।
সবশেষ অর্থবছরে বস্ত্র খাতের ১৩টি কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ দেয়নি। এছাড়া বসুন্ধরা পেপার মিলস ও লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেডও লোকসানের কারণে লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
Comments